ব্রেকিং
ঐতিহাসিক ভারত সফরে পুতিন
পালাম বিমানবন্দরে অবতরণের পর পুতিনকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএনআই

চার বছর পর রাষ্ট্রীয় সফরে নয়া দিল্লিতে এসেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। তাঁকে স্বাগত জানাতে প্রথা ভেঙে হাজির হন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দু’দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে এই উপস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে কূটনৈতিক মহলে।

পুতিনের আগমন ঘিরে দিল্লিতে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাশিয়া থেকে আসা বিশেষ নিরাপত্তাদল ছাড়াও ভারতের এনএসজি কমান্ডো, স্নাইপার, ড্রোন, জ্যামার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর নজরদারি ব্যবস্থায় সাজানো হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয়। ইতিমধ্যে পুতিনের সম্ভাব্য যাতায়াতপথ পরিদর্শন করেছে রুশ নিরাপত্তা দল।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে একই গাড়ি বহরে বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএনআই
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে একই গাড়ি বহরে বিমানবন্দর ত্যাগ করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএনআই

আজ রাতে মোদির দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন পুতিন। আগামীকাল রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনার পর তিনি রাজঘাটে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর হায়দরাবাদ হাউসে হবে শীর্ষ বৈঠক, যেখানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা–সহযোগিতা ও একাধিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু

ভারত–রাশিয়া বৈঠকে বাণিজ্য সহজীকরণ, সামুদ্রিক সহযোগিতা, স্বাস্থ্যসেবা বিনিময় ও শ্রমিক পাঠানোসহ বেশ কয়েকটি নথি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার বাজারে ওষুধ, কৃষিপণ্য ও পোশাক রপ্তানি বাড়াতে চায় ভারত। শুল্ক কমানো, দীর্ঘমেয়াদি সার সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং দক্ষ ভারতীয় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হতে পারে।

পরমাণু জ্বালানি সহযোগিতায়ও দু’দেশ নতুন দিক খুঁজছে। রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত কুদানকুলম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে স্থানীয়ভাবে যন্ত্রাংশ উৎপাদন এবং তৃতীয় দেশে যৌথ প্রকল্প নেওয়ার কথাও আলোচনায় আছে।

রেলোস’ চুক্তি: সামরিক সহযোগিতায় নতুন মাত্রা

গত ১৮ ফেব্রুয়ারিতে সই হওয়া ভারত–রাশিয়ার ‘রেসিপ্রোকাল এক্সচেঞ্জ অব লজিস্টিক সাপোর্ট’ (রেলোস) চুক্তিটি মঙ্গলবার রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ স্টেট ড্যুমায় অনুমোদন পায়। এই চুক্তির ফলে দুই দেশের সামরিক বাহিনী পরস্পরের দেশে যাতায়াত, সামরিক সরঞ্জাম পাঠানো এবং সেখানকার সামরিক অবকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে।

চুক্তির আওতায় যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ, মানবিক সহায়তা, ত্রাণ অভিযান এবং সামরিক প্রয়োজনেই একে অপরের আকাশসীমা ও বন্দর ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।

রাশিয়ার ফার্স্ট ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ডেনিস মান্তুরোভ জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা 'কৌশলগত' মাত্রা পেয়েছে। ভবিষ্যতে শিল্প–কারিগরি পর্যায়ে আরও গভীর সহযোগিতার পরিকল্পনাও রয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের সামরিক সরঞ্জামের বড় অংশই আসে রাশিয়া থেকে, এবং এই ধারা অব্যাহত থাকবে। ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ এবং আরও কয়েকটি এস–৪০০ সিস্টেম কেনা নিয়েও আলোচনার সম্ভাবনা আছে।

রাশিয়ার তেল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র–ভারতের টানাপোড়েন

রাশিয়ার ছাড়কৃত মূল্যের তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এ আমদানি ইউক্রেন যুদ্ধের সময় রাশিয়ার সক্ষমতা ধরে রাখতে সাহায্য করছে। এর জবাবে ভারত জানিয়েছে, ১৪০ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই তেল অপরিহার্য।

রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ না করায় ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ফলে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। তবে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রুশ কোম্পানি থেকে তেল না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি; নিষেধাজ্ঞামুক্ত কোম্পানিগুলোকে রাখা হয়েছে বিকল্প হিসেবে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বাজার পরিস্থিতি ও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বিবেচনায় নিয়েই ভারত ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নেবে; রুশ তেল সম্পূর্ণ বন্ধ করার সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ।