অন্তর্বর্তী সরকারের মাত্র ২টি সংস্কার সফল: রিফর্ম ট্র্যাকার

অন্তর্বর্তী সরকারের মাত্র ২টি সংস্কার সফল: রিফর্ম ট্র্যাকার
নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া ১২৮টি সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে মাত্র দুটি জায়গায় সংস্কার সফল হয়েছে বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকারের প্রতিবেদনে। অর্থনীতিবিদ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, দেশে সংস্কারের উদ্দীপনা হারিয়ে গেছে।
তার মতে, শুধু ভোটার নন, রাজনীতিবিদরাও নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর সহিংসতা ও হামলার আশঙ্কা নতুন করে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার আদৌ একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কিনা।
তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগের ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন তিনি।
দেবপ্রিয় বলেন, যে উদ্দীপনা, যে উত্তেজনা নিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম সরকারের আহ্বানে, সেই উদ্যোগ বা উদ্দীপনা কোথায় যেন ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে। সংস্কার এমন একটি বিষয়, যেখানে তত্ত্ব এবং প্রয়োগ একে অপরের সঙ্গে কীভাবে সংশ্লিষ্ট হবে, এটা অনেকখানি পরিপ্রেক্ষিতের ওপর নির্ভর করে।
আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিপন্ন জনগোষ্ঠী বলতে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায়, কিংবা ভিন্নমতাবলম্বীদের কথা আলোচনায় আসে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তার বিষয়টি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না– এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার ঘটনায় এখন প্রশ্ন উঠেছে– আসন্ন নির্বাচনে আদৌ নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না। নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ নির্বাচনি পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবে কি না– এ বিষয়ে খুব বড় একটি প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্-নির্বাচনি সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এ আলোচনার ভিত্তিতেই একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ আদৌ সম্ভব কিনা– এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।
সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমান সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত্তি তৈরি হয়েছে। তার মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট শ্রেণি প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার পরিণতিতে তৈরি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি। এর ফল হিসেবে দেশে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও এক ধরনের অলিগার্কিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।
তার ভাষায়, স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ– এই তিনটি জায়গায় সব সময় ঘাটতি ছিল। তিনি বলেন, কেবল পরিকল্পনা বা নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়, এর জন্য নাগরিকদের ধারাবাহিক ও সচেতন অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কার কোনো এককালীন পরিকল্পনার বিষয় নয়। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সক্রিয় ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির মহাসাগর দেখেছেন বলে এ সময় মন্তব্য করেন শ্রম ও নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, আমি কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে গিয়েছি, টোটালি কলাপসড। এখন দুটো মন্ত্রণালয়ে আছি, টোটালি কলাপসড। এ প্রশাসনকে আমি এক্সপ্লেইন করতে পারছি না যে হাউ টু ব্রিং দেম আপ। তিনি বলেন, অনেক মাফিয়া তাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এখন নতুন নতুন মাফিয়ার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে যে লেবার অ্যাক্ট হয়েছে সেটা অনেক বড় অর্জন। অনেক কিছু হয়নি– সেটা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কারণে। আমাদের পোর্টে এরইমধ্যে এক বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট এসেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমি একটু হতাশা প্রকাশ করছি। রিফর্ম কমিশন যে মতামত দিয়েছে সেগুলোর সব বিষয়ে একমত নই। নির্বাচন কমিশনের রিফর্ম সুপারিশ অনেক বিষয়ই বাস্তবসম্মত নয়।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের দেয়া শতাধিক প্রস্তাবের একটিও সরকার বাস্তবায়ন করেনি বলে অভিযোগ করেন এই কমিশনপ্রধান কামাল আহমেদ। সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিশন এ আইনের খসড়া প্রস্তুত করে দিলেও সরকার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই তা বাদ দিয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী ও স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠনের প্রস্তাবও নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এর বদলে অকার্যকর ও সরকারনির্ভর প্রেস কাউন্সিলকেই পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কমিশনপ্রধান জানান, গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সহযোগিতা করার নির্দেশনা থাকলেও সরকারি দপ্তরগুলো থেকে তথ্য পেতে কমিশনকে বারবার বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, গোপনীয়তার অজুহাতে কমিশনের প্রতিবেদনের কিছু অংশ, বিশেষ করে, টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়া সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে বাধা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগামী দুই মাসের মধ্যে সরকারকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান কামাল আহমেদ। তিনি সতর্ক করে বলেন, সংস্কারের সুযোগ এখনো আছে, তবে সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া ১২৮টি সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে মাত্র দুটি জায়গায় সংস্কার সফল হয়েছে বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকারের প্রতিবেদনে। অর্থনীতিবিদ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, দেশে সংস্কারের উদ্দীপনা হারিয়ে গেছে।
তার মতে, শুধু ভোটার নন, রাজনীতিবিদরাও নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর সহিংসতা ও হামলার আশঙ্কা নতুন করে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার আদৌ একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কিনা।
তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগের ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন তিনি।
দেবপ্রিয় বলেন, যে উদ্দীপনা, যে উত্তেজনা নিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম সরকারের আহ্বানে, সেই উদ্যোগ বা উদ্দীপনা কোথায় যেন ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে। সংস্কার এমন একটি বিষয়, যেখানে তত্ত্ব এবং প্রয়োগ একে অপরের সঙ্গে কীভাবে সংশ্লিষ্ট হবে, এটা অনেকখানি পরিপ্রেক্ষিতের ওপর নির্ভর করে।
আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিপন্ন জনগোষ্ঠী বলতে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায়, কিংবা ভিন্নমতাবলম্বীদের কথা আলোচনায় আসে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তার বিষয়টি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না– এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার ঘটনায় এখন প্রশ্ন উঠেছে– আসন্ন নির্বাচনে আদৌ নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না। নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ নির্বাচনি পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবে কি না– এ বিষয়ে খুব বড় একটি প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্-নির্বাচনি সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এ আলোচনার ভিত্তিতেই একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ আদৌ সম্ভব কিনা– এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।
সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমান সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত্তি তৈরি হয়েছে। তার মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট শ্রেণি প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার পরিণতিতে তৈরি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি। এর ফল হিসেবে দেশে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও এক ধরনের অলিগার্কিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।
তার ভাষায়, স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ– এই তিনটি জায়গায় সব সময় ঘাটতি ছিল। তিনি বলেন, কেবল পরিকল্পনা বা নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়, এর জন্য নাগরিকদের ধারাবাহিক ও সচেতন অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কার কোনো এককালীন পরিকল্পনার বিষয় নয়। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সক্রিয় ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির মহাসাগর দেখেছেন বলে এ সময় মন্তব্য করেন শ্রম ও নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, আমি কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে গিয়েছি, টোটালি কলাপসড। এখন দুটো মন্ত্রণালয়ে আছি, টোটালি কলাপসড। এ প্রশাসনকে আমি এক্সপ্লেইন করতে পারছি না যে হাউ টু ব্রিং দেম আপ। তিনি বলেন, অনেক মাফিয়া তাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এখন নতুন নতুন মাফিয়ার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে যে লেবার অ্যাক্ট হয়েছে সেটা অনেক বড় অর্জন। অনেক কিছু হয়নি– সেটা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কারণে। আমাদের পোর্টে এরইমধ্যে এক বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট এসেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমি একটু হতাশা প্রকাশ করছি। রিফর্ম কমিশন যে মতামত দিয়েছে সেগুলোর সব বিষয়ে একমত নই। নির্বাচন কমিশনের রিফর্ম সুপারিশ অনেক বিষয়ই বাস্তবসম্মত নয়।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের দেয়া শতাধিক প্রস্তাবের একটিও সরকার বাস্তবায়ন করেনি বলে অভিযোগ করেন এই কমিশনপ্রধান কামাল আহমেদ। সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিশন এ আইনের খসড়া প্রস্তুত করে দিলেও সরকার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই তা বাদ দিয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী ও স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠনের প্রস্তাবও নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এর বদলে অকার্যকর ও সরকারনির্ভর প্রেস কাউন্সিলকেই পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কমিশনপ্রধান জানান, গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সহযোগিতা করার নির্দেশনা থাকলেও সরকারি দপ্তরগুলো থেকে তথ্য পেতে কমিশনকে বারবার বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, গোপনীয়তার অজুহাতে কমিশনের প্রতিবেদনের কিছু অংশ, বিশেষ করে, টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়া সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে বাধা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগামী দুই মাসের মধ্যে সরকারকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান কামাল আহমেদ। তিনি সতর্ক করে বলেন, সংস্কারের সুযোগ এখনো আছে, তবে সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের মাত্র ২টি সংস্কার সফল: রিফর্ম ট্র্যাকার
নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া ১২৮টি সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে মাত্র দুটি জায়গায় সংস্কার সফল হয়েছে বলে উঠে এসেছে বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকারের প্রতিবেদনে। অর্থনীতিবিদ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, দেশে সংস্কারের উদ্দীপনা হারিয়ে গেছে।
তার মতে, শুধু ভোটার নন, রাজনীতিবিদরাও নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর সহিংসতা ও হামলার আশঙ্কা নতুন করে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার আদৌ একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কিনা।
তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগের ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন তিনি।
দেবপ্রিয় বলেন, যে উদ্দীপনা, যে উত্তেজনা নিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম সরকারের আহ্বানে, সেই উদ্যোগ বা উদ্দীপনা কোথায় যেন ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে। সংস্কার এমন একটি বিষয়, যেখানে তত্ত্ব এবং প্রয়োগ একে অপরের সঙ্গে কীভাবে সংশ্লিষ্ট হবে, এটা অনেকখানি পরিপ্রেক্ষিতের ওপর নির্ভর করে।
আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিপন্ন জনগোষ্ঠী বলতে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায়, কিংবা ভিন্নমতাবলম্বীদের কথা আলোচনায় আসে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তার বিষয়টি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না– এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার ঘটনায় এখন প্রশ্ন উঠেছে– আসন্ন নির্বাচনে আদৌ নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না। নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ নির্বাচনি পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবে কি না– এ বিষয়ে খুব বড় একটি প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্-নির্বাচনি সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এ আলোচনার ভিত্তিতেই একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ আদৌ সম্ভব কিনা– এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।
সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমান সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত্তি তৈরি হয়েছে। তার মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট শ্রেণি প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার পরিণতিতে তৈরি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি। এর ফল হিসেবে দেশে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও এক ধরনের অলিগার্কিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।
তার ভাষায়, স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ– এই তিনটি জায়গায় সব সময় ঘাটতি ছিল। তিনি বলেন, কেবল পরিকল্পনা বা নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়, এর জন্য নাগরিকদের ধারাবাহিক ও সচেতন অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কার কোনো এককালীন পরিকল্পনার বিষয় নয়। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সক্রিয় ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির মহাসাগর দেখেছেন বলে এ সময় মন্তব্য করেন শ্রম ও নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, আমি কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে গিয়েছি, টোটালি কলাপসড। এখন দুটো মন্ত্রণালয়ে আছি, টোটালি কলাপসড। এ প্রশাসনকে আমি এক্সপ্লেইন করতে পারছি না যে হাউ টু ব্রিং দেম আপ। তিনি বলেন, অনেক মাফিয়া তাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এখন নতুন নতুন মাফিয়ার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে যে লেবার অ্যাক্ট হয়েছে সেটা অনেক বড় অর্জন। অনেক কিছু হয়নি– সেটা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কারণে। আমাদের পোর্টে এরইমধ্যে এক বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট এসেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমি একটু হতাশা প্রকাশ করছি। রিফর্ম কমিশন যে মতামত দিয়েছে সেগুলোর সব বিষয়ে একমত নই। নির্বাচন কমিশনের রিফর্ম সুপারিশ অনেক বিষয়ই বাস্তবসম্মত নয়।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের দেয়া শতাধিক প্রস্তাবের একটিও সরকার বাস্তবায়ন করেনি বলে অভিযোগ করেন এই কমিশনপ্রধান কামাল আহমেদ। সাংবাদিক সুরক্ষা আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, কমিশন এ আইনের খসড়া প্রস্তুত করে দিলেও সরকার কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই তা বাদ দিয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী ও স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠনের প্রস্তাবও নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এর বদলে অকার্যকর ও সরকারনির্ভর প্রেস কাউন্সিলকেই পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কমিশনপ্রধান জানান, গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সহযোগিতা করার নির্দেশনা থাকলেও সরকারি দপ্তরগুলো থেকে তথ্য পেতে কমিশনকে বারবার বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, গোপনীয়তার অজুহাতে কমিশনের প্রতিবেদনের কিছু অংশ, বিশেষ করে, টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়া সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে বাধা দেওয়া হয়েছে।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগামী দুই মাসের মধ্যে সরকারকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান কামাল আহমেদ। তিনি সতর্ক করে বলেন, সংস্কারের সুযোগ এখনো আছে, তবে সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।