অসাংবিধানিক ক্ষমতা ও অপশাসনের অঘোষিত সহযোগী ছিল বিচার বিভাগ: প্রধান বিচারপতি

অসাংবিধানিক ক্ষমতা ও অপশাসনের অঘোষিত সহযোগী ছিল বিচার বিভাগ: প্রধান বিচারপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচার বিভাগ বিভিন্ন সময়ে অসাংবিধানিক ক্ষমতা, অপশাসন ও রাষ্ট্রীয় কপট-কৌশলের অঘোষিত সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে বিদায়ী অভিভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
সারা দেশের জেলা আদালতগুলোতে কর্মরত উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'অনেক বিচারক দুঃশাসনের বলয়কে আড়াল করেছেন এবং অন্যায় ও অবিচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। বিচারকদের এই নৈতিক বিচ্যুতি রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিচ্যুতির সঙ্গে মিলিত হয়ে জনসাধারণকে শেষ পর্যন্ত জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধের পথে ঠেলে দেওয়ার অন্যতম অনুঘটক হয়েছে।
তিনি বলেন, সুসজ্জিত আদালতের পরিবেশ বিচারকদের ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয় নয়; এটি বিচারপ্রার্থী জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য। একই সঙ্গে বিচারকদের আবাসন সংকট নিরসনে স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিয়মিত বদলির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সম্পূর্ণ সুসজ্জিত বাসগৃহ নির্মাণ জরুরি। বিচারকদের মানসিক প্রশান্তি ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত না হলে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও ন্যায়বোধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রধান বিচারপতি স্বীকার করেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ-সংস্কৃতি এখনও কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি। আধুনিক ও কার্যকর প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে বিদ্যমান প্রশিক্ষণ সুযোগের ন্যূনতম সদ্ব্যবহারেও অনেক বিচারকের অনীহা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জ্ঞান অর্জন ও পাঠাভ্যাসকে জীবনের পরম দায় হিসেবে নিতে হবে। কেবল দায়িত্ব পালন নয়, বরং উৎকর্ষের অন্বেষাই বিচারচর্চার ভিত্তি হওয়া উচিত। আইনের বাইরেও সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাষ্ট্রচিন্তা এবং আধুনিক প্রযুক্তি—বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিবেশবিজ্ঞান ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকদের সিদ্ধান্ত শুধু মামলার নিষ্পত্তিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না; অনেক সময় তা রাষ্ট্র ও ইতিহাসের গতিপথও নির্ধারণ করে। এ কারণে ধ্রুপদি সাহিত্য, দর্শন ও আইনের ইতিহাসে গভীরভাবে অবগাহনের প্রয়োজন রয়েছে।
বিচারকদের উদার চিন্তা ও দূরদর্শিতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রভু-ভৃত্য মানসিকতায় আবদ্ধ থাকলে বিচার ব্যবস্থা একদিন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। বিচারিক সেবাকে নাগরিক অধিকার হিসেবে না দেখে প্রশাসনিক অনুগ্রহ হিসেবে বিবেচনা করলে ভবিষ্যতে বিকল্প নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বা বিচার ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটিকে বাস্তবিক অর্থে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও ফলপ্রসূ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। পরবর্তী প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এই সচিবালয় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার স্থায়ী ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, অসৎ বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিচার বিভাগের ভেতরে সৃষ্ট অন্যায়ের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক পদলেহন পরিহার করে বিচারকদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিচারকদের প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্প্রসারণ, ই-কজলিস্ট ও কেস ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা চালু, ভার্চুয়াল শুনানি এবং পেপার-ফ্রি আদালত গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। পাশাপাশি ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা এবং বিচারক নিয়োগ পরীক্ষার সিলেবাস যুগোপযোগী করার তাগিদ দেন।
অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিচার বিভাগ বিভিন্ন সময়ে অসাংবিধানিক ক্ষমতা, অপশাসন ও রাষ্ট্রীয় কপট-কৌশলের অঘোষিত সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে বিদায়ী অভিভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
সারা দেশের জেলা আদালতগুলোতে কর্মরত উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'অনেক বিচারক দুঃশাসনের বলয়কে আড়াল করেছেন এবং অন্যায় ও অবিচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। বিচারকদের এই নৈতিক বিচ্যুতি রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিচ্যুতির সঙ্গে মিলিত হয়ে জনসাধারণকে শেষ পর্যন্ত জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধের পথে ঠেলে দেওয়ার অন্যতম অনুঘটক হয়েছে।
তিনি বলেন, সুসজ্জিত আদালতের পরিবেশ বিচারকদের ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয় নয়; এটি বিচারপ্রার্থী জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য। একই সঙ্গে বিচারকদের আবাসন সংকট নিরসনে স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিয়মিত বদলির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সম্পূর্ণ সুসজ্জিত বাসগৃহ নির্মাণ জরুরি। বিচারকদের মানসিক প্রশান্তি ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত না হলে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও ন্যায়বোধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রধান বিচারপতি স্বীকার করেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ-সংস্কৃতি এখনও কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি। আধুনিক ও কার্যকর প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে বিদ্যমান প্রশিক্ষণ সুযোগের ন্যূনতম সদ্ব্যবহারেও অনেক বিচারকের অনীহা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জ্ঞান অর্জন ও পাঠাভ্যাসকে জীবনের পরম দায় হিসেবে নিতে হবে। কেবল দায়িত্ব পালন নয়, বরং উৎকর্ষের অন্বেষাই বিচারচর্চার ভিত্তি হওয়া উচিত। আইনের বাইরেও সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাষ্ট্রচিন্তা এবং আধুনিক প্রযুক্তি—বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিবেশবিজ্ঞান ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকদের সিদ্ধান্ত শুধু মামলার নিষ্পত্তিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না; অনেক সময় তা রাষ্ট্র ও ইতিহাসের গতিপথও নির্ধারণ করে। এ কারণে ধ্রুপদি সাহিত্য, দর্শন ও আইনের ইতিহাসে গভীরভাবে অবগাহনের প্রয়োজন রয়েছে।
বিচারকদের উদার চিন্তা ও দূরদর্শিতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রভু-ভৃত্য মানসিকতায় আবদ্ধ থাকলে বিচার ব্যবস্থা একদিন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। বিচারিক সেবাকে নাগরিক অধিকার হিসেবে না দেখে প্রশাসনিক অনুগ্রহ হিসেবে বিবেচনা করলে ভবিষ্যতে বিকল্প নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বা বিচার ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটিকে বাস্তবিক অর্থে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও ফলপ্রসূ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। পরবর্তী প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এই সচিবালয় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার স্থায়ী ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, অসৎ বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিচার বিভাগের ভেতরে সৃষ্ট অন্যায়ের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক পদলেহন পরিহার করে বিচারকদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিচারকদের প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্প্রসারণ, ই-কজলিস্ট ও কেস ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা চালু, ভার্চুয়াল শুনানি এবং পেপার-ফ্রি আদালত গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। পাশাপাশি ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা এবং বিচারক নিয়োগ পরীক্ষার সিলেবাস যুগোপযোগী করার তাগিদ দেন।
অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অসাংবিধানিক ক্ষমতা ও অপশাসনের অঘোষিত সহযোগী ছিল বিচার বিভাগ: প্রধান বিচারপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচার বিভাগ বিভিন্ন সময়ে অসাংবিধানিক ক্ষমতা, অপশাসন ও রাষ্ট্রীয় কপট-কৌশলের অঘোষিত সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আজ রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে বিদায়ী অভিভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
সারা দেশের জেলা আদালতগুলোতে কর্মরত উচ্চ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'অনেক বিচারক দুঃশাসনের বলয়কে আড়াল করেছেন এবং অন্যায় ও অবিচারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। বিচারকদের এই নৈতিক বিচ্যুতি রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিচ্যুতির সঙ্গে মিলিত হয়ে জনসাধারণকে শেষ পর্যন্ত জুলাই-আগস্টের রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধের পথে ঠেলে দেওয়ার অন্যতম অনুঘটক হয়েছে।
তিনি বলেন, সুসজ্জিত আদালতের পরিবেশ বিচারকদের ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয় নয়; এটি বিচারপ্রার্থী জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য। একই সঙ্গে বিচারকদের আবাসন সংকট নিরসনে স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিয়মিত বদলির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সম্পূর্ণ সুসজ্জিত বাসগৃহ নির্মাণ জরুরি। বিচারকদের মানসিক প্রশান্তি ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত না হলে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও ন্যায়বোধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রধান বিচারপতি স্বীকার করেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ-সংস্কৃতি এখনও কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছায়নি। আধুনিক ও কার্যকর প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে বিদ্যমান প্রশিক্ষণ সুযোগের ন্যূনতম সদ্ব্যবহারেও অনেক বিচারকের অনীহা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জ্ঞান অর্জন ও পাঠাভ্যাসকে জীবনের পরম দায় হিসেবে নিতে হবে। কেবল দায়িত্ব পালন নয়, বরং উৎকর্ষের অন্বেষাই বিচারচর্চার ভিত্তি হওয়া উচিত। আইনের বাইরেও সমাজ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাষ্ট্রচিন্তা এবং আধুনিক প্রযুক্তি—বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিবেশবিজ্ঞান ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকদের সিদ্ধান্ত শুধু মামলার নিষ্পত্তিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না; অনেক সময় তা রাষ্ট্র ও ইতিহাসের গতিপথও নির্ধারণ করে। এ কারণে ধ্রুপদি সাহিত্য, দর্শন ও আইনের ইতিহাসে গভীরভাবে অবগাহনের প্রয়োজন রয়েছে।
বিচারকদের উদার চিন্তা ও দূরদর্শিতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রভু-ভৃত্য মানসিকতায় আবদ্ধ থাকলে বিচার ব্যবস্থা একদিন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। বিচারিক সেবাকে নাগরিক অধিকার হিসেবে না দেখে প্রশাসনিক অনুগ্রহ হিসেবে বিবেচনা করলে ভবিষ্যতে বিকল্প নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বা বিচার ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটিকে বাস্তবিক অর্থে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও ফলপ্রসূ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। পরবর্তী প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এই সচিবালয় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতার স্থায়ী ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, অসৎ বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিচার বিভাগের ভেতরে সৃষ্ট অন্যায়ের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক পদলেহন পরিহার করে বিচারকদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিচারকদের প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্প্রসারণ, ই-কজলিস্ট ও কেস ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা চালু, ভার্চুয়াল শুনানি এবং পেপার-ফ্রি আদালত গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। পাশাপাশি ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা এবং বিচারক নিয়োগ পরীক্ষার সিলেবাস যুগোপযোগী করার তাগিদ দেন।
অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।