বহুমাত্রিক সঙ্কটে কৃষিখাত
ধানের উৎপাদন ৮ শতাংশ কমার শঙ্কা
সবচেয়ে বড় সংকট বোরো ধানের উৎপাদনে
ভ্যারাইটাল ডেভেলপমেন্ট, ফলে উৎপাদন আরো বাড়ছে

বহুমাত্রিক সঙ্কটে কৃষিখাত
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রাকৃতিক ও অ-প্রাকৃতিক দুই ধরনের চাপ ক্রমশ বাংলাদেশের কৃষি খাতের উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা, অনিশ্চিত বৃষ্টিপাত, বেড়ে যাওয়া তাপমাত্রা, অব্যবস্থাপনা ও যন্ত্রায়নের ধীরগতি সব মিলিয়ে দেশের কৃষি এখন বহুমাত্রিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০৩০-২০৫০ সালের মধ্যে ধানের উৎপাদন কমে যেতে পারে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ, যা খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঙ্কটের বিষয়গুলো মাথায় রেখই ভ্যারাইটাল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। বিআইডিএসের মহাপরিচালক প্রফেসর একে এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
তবে এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের (ইউজিভি) সাবেক উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলম সিটিজেন জার্নালকে বলেন, বিআইডিএস যে ধারণা করছে, এ ধরনের সমস্যা তো রয়েছেই। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে উৎপাদনের উপরে প্রভাব পড়ছে। কিন্তু একইসঙ্গে আমাদের ভ্যারাইটাল ডেভেলপমেন্টও হচ্ছে, উৎপাদন কৌশল পরিবর্তন হচ্ছে।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, কৃষিখাতের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাকে মাইনাস করে দিচ্ছে। ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ সম্ভাবনা থাকা সত্ব্ওে আমাদের উৎপাদন বাড়ছে। বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ণ হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন আমলে নিয়েই ভ্যারাইটাল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। ফলে গবেষণার মাধ্যমে দেশে একশরও বেশি জাতের ধান উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে কৃষক পর্যায়ে এ সব তথ্য অনেক কম পৌছায় উল্লেখ করে ড. জাহাঙ্গীর বলেন, কৃষক এর্ব গ্রাহক পর্যায়ে আরো বেশি তথ্য পৌছাতে হলে সম্প্রচার কার্যক্রম জোরালো করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ুর মারাত্মক পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাপমাত্রা বছরে বছরে বাড়ছে। মৌসুমি বৃষ্টিপাত কখনো অতিরিক্ত, কখনো সম্পূর্ণ অনিয়মিত হচ্ছে। এতে ধান, গম, ভুট্টাসহ প্রধান খাদ্যশস্যের জীবনচক্র ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মাঠে কাজ করা শ্রমিকদের ওপরও তাপমাত্রার সরাসরি প্রভাব পড়ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় তাপপ্রবাহের কারণে কৃষি শ্রমঘণ্টা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এতে উৎপাদনশীলতা কমছে। জমি প্রস্তুত করতে সময় লাগছে বেশি। আর শ্রম ব্যয়ও বাড়ছে দ্রুত।
শুধু কৃষক নয়, এই ধাক্কা লাগছে পুরো গ্রামীণ অর্থনীতিতে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে শ্রমিক উৎপাদন কমে গেলে ক্রয়ক্ষমতা, বাজারে লেনদেন, পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেই সঙ্গে বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো জলবায়ুর দুর্যোগ কৃষিকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে।
গবেষণায় আরো বলা হয়, জলবায়ুগত সংকটের পাশাপাশি অ-পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোও কৃষিকে পিছিয়ে দিচ্ছে। যন্ত্রায়নের অগ্রগতি হলেও ক্ষুদ্র কৃষকরা এখনো এই প্রযুক্তি পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারছেন না। মূলত উচ্চমূল্য, তথ্যের ঘাটতি এবং প্রশিক্ষণের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়লেও মাঠপর্যায়ে সেই সুবিধা পৌঁছাতে সময় লাগছে বেশি। দেশের ৮০ শতাংশ কৃষিজমি এখনো একক ফসল, মূলত ধান নির্ভর, যা কৃষি অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যহীন ও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। একক ফসলের ওপর এত বেশি নির্ভরশীলতা মানে একটি মৌসুম ব্যর্থ হলে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় সরাসরি আঘাত।
সবচেয়ে বড় সংকট দেখা যাচ্ছে বোরো ধানের উৎপাদনে। বিগত কয়েক বছর ধরে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক করে আসছে যে বোরো মৌসুমে উৎপাদন বাড়ানোর হার স্থবির হয়ে গেছে। নতুন হাইব্রিড, পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি বা লবণাক্ততা সহনশীল জাত না নিলে ভবিষ্যতে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমটি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ও আন্তর্জাতিক জলবায়ুসংক্রান্ত বিশ্লেষণ বলছে, ভবিষ্যতের কৃষিব্যবস্থাকে বাঁচাতে হলে এখনই বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে- ফসল বৈচিত্র্য, আধুনিক কৃষিযন্ত্র, পানি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, গবেষণানির্ভর নতুন জাত ও টেকসই কীটনাশক ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। অন্যথায়, ২০৫০ সালের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক এনামুল হক বলেন, কৃষিতে মূল্য সংযোজন ১২ থেকে বেড়ে ২৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দারিদ্র্য হ্রাসে বিভিন্ন ফসলের সম্মিলিত অবদানকে শক্তিশালী করেছে। তবে ধানের মতো যেসব বাজারে সরকার দাম নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে দারিদ্র্য কমার প্রভাব তুলনামূলক কম। শ্রমশক্তি বেশি হলেও কৃষকের লাভ সীমিত থাকায় তারা এখন বেশি ঝুঁকছে চুক্তিভিত্তিক চাষে।
এদিকে ইউরিয়া সারের ব্যবহার বাড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যদিও প্রমাণ এখনো চূড়ান্ত নয়। এডব্লিউডি প্রযুক্তি কৃষকের খরচ বাড়ায় বলে গ্রহণযোগ্যতা কম। জলবায়ু পরিবর্তনও কৃষিতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
পরিকল্পনা সচিব শাকিল আখতার বলেন, বাংলাদেশের কৃষি তথ্যব্যবস্থায় বড় ধরনের গরমিল রয়েছে। বিবিএস ও খামারবাড়ির তথ্য এক নয়। অথচ এ দুটি প্রতিষ্ঠান একই এলাকার মধ্যে। সঠিক সমন্বয় না থাকায় ফসল উৎপাদনের তথ্যও নির্ভরযোগ্য থাকে না। কৃষকের জন্য প্রতিবছর বড় অঙ্কের প্রকল্প নেয়া হলেও কতগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়, তা স্পষ্ট নয়। অনেক কৃষি প্রকল্পে খরচ অযথা বাড়ে এবং ফেজ শেষ হওয়ার পর কাজ আর এগোয় না।

প্রাকৃতিক ও অ-প্রাকৃতিক দুই ধরনের চাপ ক্রমশ বাংলাদেশের কৃষি খাতের উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা, অনিশ্চিত বৃষ্টিপাত, বেড়ে যাওয়া তাপমাত্রা, অব্যবস্থাপনা ও যন্ত্রায়নের ধীরগতি সব মিলিয়ে দেশের কৃষি এখন বহুমাত্রিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০৩০-২০৫০ সালের মধ্যে ধানের উৎপাদন কমে যেতে পারে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ, যা খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঙ্কটের বিষয়গুলো মাথায় রেখই ভ্যারাইটাল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। বিআইডিএসের মহাপরিচালক প্রফেসর একে এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
তবে এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের (ইউজিভি) সাবেক উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলম সিটিজেন জার্নালকে বলেন, বিআইডিএস যে ধারণা করছে, এ ধরনের সমস্যা তো রয়েছেই। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে উৎপাদনের উপরে প্রভাব পড়ছে। কিন্তু একইসঙ্গে আমাদের ভ্যারাইটাল ডেভেলপমেন্টও হচ্ছে, উৎপাদন কৌশল পরিবর্তন হচ্ছে।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, কৃষিখাতের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাকে মাইনাস করে দিচ্ছে। ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ সম্ভাবনা থাকা সত্ব্ওে আমাদের উৎপাদন বাড়ছে। বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ণ হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন আমলে নিয়েই ভ্যারাইটাল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। ফলে গবেষণার মাধ্যমে দেশে একশরও বেশি জাতের ধান উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে কৃষক পর্যায়ে এ সব তথ্য অনেক কম পৌছায় উল্লেখ করে ড. জাহাঙ্গীর বলেন, কৃষক এর্ব গ্রাহক পর্যায়ে আরো বেশি তথ্য পৌছাতে হলে সম্প্রচার কার্যক্রম জোরালো করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ুর মারাত্মক পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাপমাত্রা বছরে বছরে বাড়ছে। মৌসুমি বৃষ্টিপাত কখনো অতিরিক্ত, কখনো সম্পূর্ণ অনিয়মিত হচ্ছে। এতে ধান, গম, ভুট্টাসহ প্রধান খাদ্যশস্যের জীবনচক্র ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মাঠে কাজ করা শ্রমিকদের ওপরও তাপমাত্রার সরাসরি প্রভাব পড়ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় তাপপ্রবাহের কারণে কৃষি শ্রমঘণ্টা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এতে উৎপাদনশীলতা কমছে। জমি প্রস্তুত করতে সময় লাগছে বেশি। আর শ্রম ব্যয়ও বাড়ছে দ্রুত।
শুধু কৃষক নয়, এই ধাক্কা লাগছে পুরো গ্রামীণ অর্থনীতিতে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে শ্রমিক উৎপাদন কমে গেলে ক্রয়ক্ষমতা, বাজারে লেনদেন, পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেই সঙ্গে বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো জলবায়ুর দুর্যোগ কৃষিকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে।
গবেষণায় আরো বলা হয়, জলবায়ুগত সংকটের পাশাপাশি অ-পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোও কৃষিকে পিছিয়ে দিচ্ছে। যন্ত্রায়নের অগ্রগতি হলেও ক্ষুদ্র কৃষকরা এখনো এই প্রযুক্তি পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারছেন না। মূলত উচ্চমূল্য, তথ্যের ঘাটতি এবং প্রশিক্ষণের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়লেও মাঠপর্যায়ে সেই সুবিধা পৌঁছাতে সময় লাগছে বেশি। দেশের ৮০ শতাংশ কৃষিজমি এখনো একক ফসল, মূলত ধান নির্ভর, যা কৃষি অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যহীন ও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। একক ফসলের ওপর এত বেশি নির্ভরশীলতা মানে একটি মৌসুম ব্যর্থ হলে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় সরাসরি আঘাত।
সবচেয়ে বড় সংকট দেখা যাচ্ছে বোরো ধানের উৎপাদনে। বিগত কয়েক বছর ধরে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক করে আসছে যে বোরো মৌসুমে উৎপাদন বাড়ানোর হার স্থবির হয়ে গেছে। নতুন হাইব্রিড, পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি বা লবণাক্ততা সহনশীল জাত না নিলে ভবিষ্যতে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমটি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ও আন্তর্জাতিক জলবায়ুসংক্রান্ত বিশ্লেষণ বলছে, ভবিষ্যতের কৃষিব্যবস্থাকে বাঁচাতে হলে এখনই বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে- ফসল বৈচিত্র্য, আধুনিক কৃষিযন্ত্র, পানি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, গবেষণানির্ভর নতুন জাত ও টেকসই কীটনাশক ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। অন্যথায়, ২০৫০ সালের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক এনামুল হক বলেন, কৃষিতে মূল্য সংযোজন ১২ থেকে বেড়ে ২৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দারিদ্র্য হ্রাসে বিভিন্ন ফসলের সম্মিলিত অবদানকে শক্তিশালী করেছে। তবে ধানের মতো যেসব বাজারে সরকার দাম নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে দারিদ্র্য কমার প্রভাব তুলনামূলক কম। শ্রমশক্তি বেশি হলেও কৃষকের লাভ সীমিত থাকায় তারা এখন বেশি ঝুঁকছে চুক্তিভিত্তিক চাষে।
এদিকে ইউরিয়া সারের ব্যবহার বাড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যদিও প্রমাণ এখনো চূড়ান্ত নয়। এডব্লিউডি প্রযুক্তি কৃষকের খরচ বাড়ায় বলে গ্রহণযোগ্যতা কম। জলবায়ু পরিবর্তনও কৃষিতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
পরিকল্পনা সচিব শাকিল আখতার বলেন, বাংলাদেশের কৃষি তথ্যব্যবস্থায় বড় ধরনের গরমিল রয়েছে। বিবিএস ও খামারবাড়ির তথ্য এক নয়। অথচ এ দুটি প্রতিষ্ঠান একই এলাকার মধ্যে। সঠিক সমন্বয় না থাকায় ফসল উৎপাদনের তথ্যও নির্ভরযোগ্য থাকে না। কৃষকের জন্য প্রতিবছর বড় অঙ্কের প্রকল্প নেয়া হলেও কতগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়, তা স্পষ্ট নয়। অনেক কৃষি প্রকল্পে খরচ অযথা বাড়ে এবং ফেজ শেষ হওয়ার পর কাজ আর এগোয় না।

বহুমাত্রিক সঙ্কটে কৃষিখাত
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রাকৃতিক ও অ-প্রাকৃতিক দুই ধরনের চাপ ক্রমশ বাংলাদেশের কৃষি খাতের উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্রতা, অনিশ্চিত বৃষ্টিপাত, বেড়ে যাওয়া তাপমাত্রা, অব্যবস্থাপনা ও যন্ত্রায়নের ধীরগতি সব মিলিয়ে দেশের কৃষি এখন বহুমাত্রিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০৩০-২০৫০ সালের মধ্যে ধানের উৎপাদন কমে যেতে পারে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ, যা খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঙ্কটের বিষয়গুলো মাথায় রেখই ভ্যারাইটাল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। বিআইডিএসের মহাপরিচালক প্রফেসর একে এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
তবে এ বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের (ইউজিভি) সাবেক উপাচার্য ড. জাহাঙ্গীর আলম সিটিজেন জার্নালকে বলেন, বিআইডিএস যে ধারণা করছে, এ ধরনের সমস্যা তো রয়েছেই। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে উৎপাদনের উপরে প্রভাব পড়ছে। কিন্তু একইসঙ্গে আমাদের ভ্যারাইটাল ডেভেলপমেন্টও হচ্ছে, উৎপাদন কৌশল পরিবর্তন হচ্ছে।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, কৃষিখাতের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাকে মাইনাস করে দিচ্ছে। ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ সম্ভাবনা থাকা সত্ব্ওে আমাদের উৎপাদন বাড়ছে। বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আমাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ণ হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন আমলে নিয়েই ভ্যারাইটাল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। ফলে গবেষণার মাধ্যমে দেশে একশরও বেশি জাতের ধান উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে কৃষক পর্যায়ে এ সব তথ্য অনেক কম পৌছায় উল্লেখ করে ড. জাহাঙ্গীর বলেন, কৃষক এর্ব গ্রাহক পর্যায়ে আরো বেশি তথ্য পৌছাতে হলে সম্প্রচার কার্যক্রম জোরালো করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ুর মারাত্মক পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাপমাত্রা বছরে বছরে বাড়ছে। মৌসুমি বৃষ্টিপাত কখনো অতিরিক্ত, কখনো সম্পূর্ণ অনিয়মিত হচ্ছে। এতে ধান, গম, ভুট্টাসহ প্রধান খাদ্যশস্যের জীবনচক্র ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মাঠে কাজ করা শ্রমিকদের ওপরও তাপমাত্রার সরাসরি প্রভাব পড়ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় তাপপ্রবাহের কারণে কৃষি শ্রমঘণ্টা কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এতে উৎপাদনশীলতা কমছে। জমি প্রস্তুত করতে সময় লাগছে বেশি। আর শ্রম ব্যয়ও বাড়ছে দ্রুত।
শুধু কৃষক নয়, এই ধাক্কা লাগছে পুরো গ্রামীণ অর্থনীতিতে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে শ্রমিক উৎপাদন কমে গেলে ক্রয়ক্ষমতা, বাজারে লেনদেন, পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেই সঙ্গে বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো জলবায়ুর দুর্যোগ কৃষিকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলছে।
গবেষণায় আরো বলা হয়, জলবায়ুগত সংকটের পাশাপাশি অ-পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলোও কৃষিকে পিছিয়ে দিচ্ছে। যন্ত্রায়নের অগ্রগতি হলেও ক্ষুদ্র কৃষকরা এখনো এই প্রযুক্তি পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারছেন না। মূলত উচ্চমূল্য, তথ্যের ঘাটতি এবং প্রশিক্ষণের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়লেও মাঠপর্যায়ে সেই সুবিধা পৌঁছাতে সময় লাগছে বেশি। দেশের ৮০ শতাংশ কৃষিজমি এখনো একক ফসল, মূলত ধান নির্ভর, যা কৃষি অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যহীন ও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। একক ফসলের ওপর এত বেশি নির্ভরশীলতা মানে একটি মৌসুম ব্যর্থ হলে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় সরাসরি আঘাত।
সবচেয়ে বড় সংকট দেখা যাচ্ছে বোরো ধানের উৎপাদনে। বিগত কয়েক বছর ধরে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক করে আসছে যে বোরো মৌসুমে উৎপাদন বাড়ানোর হার স্থবির হয়ে গেছে। নতুন হাইব্রিড, পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি বা লবণাক্ততা সহনশীল জাত না নিলে ভবিষ্যতে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমটি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ও আন্তর্জাতিক জলবায়ুসংক্রান্ত বিশ্লেষণ বলছে, ভবিষ্যতের কৃষিব্যবস্থাকে বাঁচাতে হলে এখনই বহুমাত্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে- ফসল বৈচিত্র্য, আধুনিক কৃষিযন্ত্র, পানি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, গবেষণানির্ভর নতুন জাত ও টেকসই কীটনাশক ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। অন্যথায়, ২০৫০ সালের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক এনামুল হক বলেন, কৃষিতে মূল্য সংযোজন ১২ থেকে বেড়ে ২৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা দারিদ্র্য হ্রাসে বিভিন্ন ফসলের সম্মিলিত অবদানকে শক্তিশালী করেছে। তবে ধানের মতো যেসব বাজারে সরকার দাম নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে দারিদ্র্য কমার প্রভাব তুলনামূলক কম। শ্রমশক্তি বেশি হলেও কৃষকের লাভ সীমিত থাকায় তারা এখন বেশি ঝুঁকছে চুক্তিভিত্তিক চাষে।
এদিকে ইউরিয়া সারের ব্যবহার বাড়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যদিও প্রমাণ এখনো চূড়ান্ত নয়। এডব্লিউডি প্রযুক্তি কৃষকের খরচ বাড়ায় বলে গ্রহণযোগ্যতা কম। জলবায়ু পরিবর্তনও কৃষিতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
পরিকল্পনা সচিব শাকিল আখতার বলেন, বাংলাদেশের কৃষি তথ্যব্যবস্থায় বড় ধরনের গরমিল রয়েছে। বিবিএস ও খামারবাড়ির তথ্য এক নয়। অথচ এ দুটি প্রতিষ্ঠান একই এলাকার মধ্যে। সঠিক সমন্বয় না থাকায় ফসল উৎপাদনের তথ্যও নির্ভরযোগ্য থাকে না। কৃষকের জন্য প্রতিবছর বড় অঙ্কের প্রকল্প নেয়া হলেও কতগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়, তা স্পষ্ট নয়। অনেক কৃষি প্রকল্পে খরচ অযথা বাড়ে এবং ফেজ শেষ হওয়ার পর কাজ আর এগোয় না।