ব্রেকিং
এসএমই ফাউন্ডেশনকে আরো কাঠামোগতভাবে সুদৃঢ় ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে শতভাগ দেশী পণ্যের সবচেয়ে বড়ো আয়োজন ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা।

শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, আমাদের নিজস্ব একটি শক্তিশালী বাজার যেমন তৈরি হবে, তেমনি নতুন নতুন বাজারও খুঁজে বের করতে হবে। কোন দেশে কোন ধরনের পণ্যের বেশি চাহিদা আছে, কোথায় আমাদের পণ্য দিয়ে নতুন সুযোগ তৈরি করা সম্ভব-এসব বিষয়ে নিয়মিত অনুসন্ধান করা জরুরি।

তিনি আরো বলেন, দেশের এসএমই খাত-কে আরো গতিশীল ও এর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে এসএমই ফাউন্ডেশনকে কাঠামোগতভাবে সুদৃঢ় ও আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা সময়ের দাবি। এ লক্ষ্যে বাজেট, মানবসম্পদ, গবেষণা সক্ষমতা, এবং প্রযুক্তিগত অবকাঠামো বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

আজ রবিবার সকালে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের ‘হল অব ফেম’-এ মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এসএমই ফাউন্ডেশনে চেয়ারপার্সন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নুরুজ্জামান এনডিসি এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদ সদস্য ও উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিয়র অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি নাসরীন ফাতেমা আউয়াল।

সম্মানিত অতিথি ছিলেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পরিচালক পর্ষদ সদস্য ও ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক সামিম আহমেদ।

অনুষ্ঠানে 'জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০২৫' বিজয়ী ৬জন উদ্যোক্তা- বর্ষসেরা মাইক্রো উদ্যোক্তা (নারী) ক্যাটাগরিতে আহ্লাদ ফ্যশনস-এর জুয়েনা ফেরদৌস, বর্ষসেরা মাইক্রো উদ্যোক্তা (পুরুষ) ক্যাটাগরিতে রিবানা'র মো. ওয়াহিদুজ্জামান, বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা (নারী) ক্যাটাগরিতে সুতার কাব্য-এর মোছাম্মৎ সিরাজুম মুনিরা, বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা (পুরুষ) ক্যাটাগরিতে আমান প্লাস্টিক টয়েজ ইন্ডাস্ট্রিজ-এর আমান উল্লাহ, বর্ষসেরা মাঝারি উদ্যোক্তা (পুরুষ) ক্যাটাগরিতে অপরাজেয়-এর কাজী মো. মনির হোসেন এবং বর্ষসেরা স্টার্টআপ ক্যাটাগরিতে ডুবোটেক ডিজিটাল-এর মো. মাহফুজুল হকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।

এবার মেলায় অংশগ্রহণ করেছে প্রায় সাড়ে তিনশ’ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০% নারী-উদ্যোক্তা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি ৭৪টি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া হস্ত ও কারু শিল্পের ৫৪টি, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য খাতের ৪০টি, পাটজাত পণ্যের ৩৫টি, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ২৮টি, শতরঞ্জি, বাঁশ বেত, হোগলা, সুপারিখোল, কাঠের ১৫টি, খাদপণ্যের ১৪টি, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ১৩টি, জুয়েলারি শিল্পের ৯টি, প্রসাধন খাতের ৭টি, তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাতের ৫টি, হারবাল/ভেষজ শিল্পের ৫টি, প্লাস্টিক পণ্যের ৫টি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স খাতের ৩টি, ফার্নিচার খাতের ৩টি এবং অন্যান্য খাতের ১১টি স্টল।

মেলায় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সেবা প্রদানকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৮টি দপ্তর সংস্থাসহ সরকারের প্রায় ১৫টি সংস্থা, প্রায় ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে। মেলায় প্রতিদিন এসএমই বিষয়ক কর্মশালা, প্রশিক্ষণ, ব্যাংকার-উদ্যোক্তা ঋণ সংযোগ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা ২০২৫ আয়োজনে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে থাকছে সিটি ব্যাংক।

এছাড়া অন্যান্য স্পন্সর প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকবে ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও লংকা বাংলা ফাইন্যান্স, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স ও আইপিডিসি ফাইন্যান্স। দেশীয় উৎপাদনকারী অথবা সেবামূলক মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারাই মেলায় পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রয়ের সুযোগ পাবেন। বিদেশী/আমদানিকৃত কোন পণ্য মেলায় প্রদর্শন কিংবা বিক্রয় করা নিষিদ্ধ।

মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মাঝে এসএমই খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম তুলে ধরার লক্ষ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের একটি অস্থায়ী কার্যালয় রয়েছে আর গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাজের সুবিধার্থে রয়েছে একটি মিডিয়া সেন্টার।

৭-১৪ ডিসেম্বর প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত কোন প্রবেশ ফি ছাড়াই মেলা প্রাঙ্গণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। মেলায় এসএমই ঋণ বিতরণকারী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে উদ্যোক্তারা এসএমই ঋণ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য স্পষ্টীকরণসহ ব্যাংকারদের সাথে সরাসরি আলোচনা ও পরামর্শ করার সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে ব্যাংক-উদ্যোক্তা একমত হলে- উদ্যোক্তারা ঋণের জন্য মেলাতেই আবেদন করতে পারবেন এবং সম্ভব হলে, ঋণ প্রাপ্তির বিষয়েও ধারণা অর্জন করতে পারবেন।

৮ দিনের মেলার পাশাপাশি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের উইন্ডি টাউন হলে ০৮-১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ক্রেতা-দর্শনার্থী এবং এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ অর্থায়ন, পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও পণ্যের হালাল সনদ প্রাপ্তি, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ট্রেড মার্ক ও জি আই স্বীকৃতি, স্কিলস ইকো-সিস্টেম বিষয়ে আয়োজন করা হবে ৬টি সেমিনার।

এসএমই ফাউন্ডেশন ২০১২ সাল থেকে ঢাকায় ‘জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা’ আয়োজন করে আসছে। এখন পর্যন্ত ১১টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় ৩ হাজার উদ্যোক্তা তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করেছেন। গত ১১টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাগণ প্রায় ৫৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি এবং প্রায় ৯৩ কোটি টাকার পণ্যের অর্ডার পেয়েছেন। এসএমই ফাউন্ডেশন জাতীয় এসএমই মেলার পাশাপাশি প্রতি বছর ‘আঞ্চলিক/বিভাগীয় এসএমই পণ্য মেলা’ আয়োজন করে আসছে।

এখন পর্যন্ত ৯৩টি আঞ্চলিক/বিভাগীয় এসএমই পণ্য মেলায় ৫০১৭জন উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করে তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করেছেন। এসএমই উদ্যোক্তাদের অবদান ও অংশগ্রহণকে সার্বজনীনভাবে স্বীকৃতি প্রদান এবং তাঁদের উৎসাহ প্রদানে এসএমই ফাউন্ডেশন নারী ও পুরুষ- উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার’ প্রদান করছে। এই পর্যন্ত ৫৭জন উদ্যোক্তাকে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৩জন নারী, ২৩জন পুরুষ এবং একজন তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তা।