সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় ও সরকারি ইসলামী ব্যাংক ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’-এর কার্যক্রম শুরু হলো।
আজ রবিবার (৩০ নভেম্বর) সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ড সভা। এর মাধ্যমে নতুন ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করতে আর কোনো বাধা থাকল না অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
এর আগে অর্থ মন্ত্রণালের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৯ নভেম্বর প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয় সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের। যেখানে আরজিএসসি থেকে কোম্পানি নাম ছাড়পত্র, ব্যাংকের চলতি হিসাব খোলাসহ ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিধিবিধান পূরণের দায়িত্ব পড়ে সরকারের ওপর।
রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের মাধ্যমে ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু হলো। শিগগিরই আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ, সুদের হার, বতন স্কেলসহ বিস্তারিত স্কিম নির্ধারণ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, বিশ্বে ব্যাংক ব্যবস্থা ৬০০ বছর আগে যাত্রা শুরু করলেও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হয় মিসরে ১৯৬৩ সালে। ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের ইসলামী ব্যাংকিং আন্দোলন জোরদার হয়। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে তা শুরু হয় ১৯৮৩ সালে দেশ-বিদেশি উদ্যোগ ও সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।
ওআইসি ও আইডিবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী অর্থনীতি ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকব্যবস্থা প্রবর্তন করার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই প্রতিশ্রুতির আলোকে দেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি একীভূতকরণ করে নতুন একটি ব্যাংক তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও ১৭টি প্রচলিত ব্যাংকের ৪১টি ইসলামী ব্যাংকিং শাখা এবং ২১টি প্রচলিত ব্যাংক ৯০৫টি ইসলামী উইন্ডোর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
দেশে ব্যাংক মার্জারের ইতিহাস
বাংলাদেশে ব্যাংক মার্জারের ইতিহাস খুবই সংক্ষিপ্ত। ১৯৭২ সালে ১২টি ব্যাংক একীভূত করে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ২০০৯ সালে ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে একীভূত করে গঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ ১৬ বছর পর একই সময়ে পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক দুর্বল ব্যাংক একীভূত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
চ্যালেঞ্জ
ব্যাংক পরিচালনায় বিগত দিনের দুর্বলতার বদনাম অতিক্রম করে পাঁচটি ব্যাংকে জনগণের আমানত চাহিবামাত্র ফেরত দেয়া এবং আমানত সংগ্রহ, শিল্প, ব্যবসাসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ, প্রবাসী আয় সংগ্রহ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ওই পাঁচটি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশ।
অপরদিকে, মোট আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। এই দেনা-পাওনার সমন্বয় করাই কঠিন চ্যালেঞ্জ। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সমস্যায় পড়া পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগকে দেশের অর্থনীতির বিশ্লেষকরা একটি উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন, যা একটি নৈতিক চ্যালেঞ্জ।ব্যাংকগুলোর কোনো শাখা বন্ধ না করে এবং কোনো লোকবল না কমানোর ঘোষণা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ব্যাংক একীভূতকরণের প্রধান চ্যালেঞ্জ আইটি সিস্টেমের ইন্টিগ্রেশন (ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকের ব্যবহূত প্রযুক্তি তথ্যসহ একটিতে রূপান্তর করা), স্যালারি স্ট্রাকচার ন্যাশনালাইজেশন এবং পরিচালনাগত ব্যয় কমানো। দেশজুড়ে এ পাঁচ ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট আউটলেট এবং ৭৯৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। ওই শাখা, উপশাখা এবং এজেন্ট আউটলেটগুলো সারা দেশে সমন্বয় করাও একটি চ্যালেঞ্জ। এছাড়া আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো কতিপয় অর্থনীতিবিদ ও সাংবাদিক এই মার্জার প্রক্রিয়ার নেতিবাচক দিক জনগণের মাঝে বিভিন্ন উপায়ে উপস্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছে, যাতে এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়।
সম্ভাবনা
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা চিহ্নিত করার জন্য আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি এবং আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং-এই দুই সংস্থার মাধ্যমে ফরেনসিক অডিক করানো হয়।
শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্রমালিকানাধীন নতুন ব্যাংক গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিমুলেশন অনুশীলন (এক্সারসাইজ) করেছে। কোনো জরুরি অবস্থা বা ঘটনার সময় কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে, তা পরীক্ষা করা হয় যে পদ্ধতির মাধ্যমে, সেটাই হচ্ছে সিমুলেশন অনুশীলন। এর ভিত্তিতে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য আগামী ১০ বছর মেয়াদি একটি আর্থিক ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার তদারকি ও নীতি নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বতন্ত্র ‘ইসলামী ব্যাংকিং রেগুলেশন্স অ্যান্ড পলিসি’ বিভাগ গঠন করেছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং আইন তৈরির কাজ চলমান। সরকার ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে একটি আইনি কাঠামো তৈরি করেছে। এই অধ্যাদেশে সংকটপূর্ণ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ‘ডিস্ট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’ গঠন অথবা স্থানীয় বা বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সম্পদ হস্তান্তর করার কথা বলা আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় ও সরকারি ইসলামী ব্যাংক ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’-এর কার্যক্রম শুরু হলো।
আজ রবিবার (৩০ নভেম্বর) সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ড সভা। এর মাধ্যমে নতুন ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করতে আর কোনো বাধা থাকল না অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
এর আগে অর্থ মন্ত্রণালের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৯ নভেম্বর প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয় সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের। যেখানে আরজিএসসি থেকে কোম্পানি নাম ছাড়পত্র, ব্যাংকের চলতি হিসাব খোলাসহ ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিধিবিধান পূরণের দায়িত্ব পড়ে সরকারের ওপর।
রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের মাধ্যমে ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু হলো। শিগগিরই আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ, সুদের হার, বতন স্কেলসহ বিস্তারিত স্কিম নির্ধারণ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, বিশ্বে ব্যাংক ব্যবস্থা ৬০০ বছর আগে যাত্রা শুরু করলেও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হয় মিসরে ১৯৬৩ সালে। ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের ইসলামী ব্যাংকিং আন্দোলন জোরদার হয়। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে তা শুরু হয় ১৯৮৩ সালে দেশ-বিদেশি উদ্যোগ ও সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।
ওআইসি ও আইডিবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী অর্থনীতি ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকব্যবস্থা প্রবর্তন করার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই প্রতিশ্রুতির আলোকে দেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি একীভূতকরণ করে নতুন একটি ব্যাংক তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও ১৭টি প্রচলিত ব্যাংকের ৪১টি ইসলামী ব্যাংকিং শাখা এবং ২১টি প্রচলিত ব্যাংক ৯০৫টি ইসলামী উইন্ডোর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
দেশে ব্যাংক মার্জারের ইতিহাস
বাংলাদেশে ব্যাংক মার্জারের ইতিহাস খুবই সংক্ষিপ্ত। ১৯৭২ সালে ১২টি ব্যাংক একীভূত করে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ২০০৯ সালে ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে একীভূত করে গঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ ১৬ বছর পর একই সময়ে পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক দুর্বল ব্যাংক একীভূত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
চ্যালেঞ্জ
ব্যাংক পরিচালনায় বিগত দিনের দুর্বলতার বদনাম অতিক্রম করে পাঁচটি ব্যাংকে জনগণের আমানত চাহিবামাত্র ফেরত দেয়া এবং আমানত সংগ্রহ, শিল্প, ব্যবসাসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ, প্রবাসী আয় সংগ্রহ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ওই পাঁচটি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশ।
অপরদিকে, মোট আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। এই দেনা-পাওনার সমন্বয় করাই কঠিন চ্যালেঞ্জ। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সমস্যায় পড়া পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগকে দেশের অর্থনীতির বিশ্লেষকরা একটি উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন, যা একটি নৈতিক চ্যালেঞ্জ।ব্যাংকগুলোর কোনো শাখা বন্ধ না করে এবং কোনো লোকবল না কমানোর ঘোষণা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ব্যাংক একীভূতকরণের প্রধান চ্যালেঞ্জ আইটি সিস্টেমের ইন্টিগ্রেশন (ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকের ব্যবহূত প্রযুক্তি তথ্যসহ একটিতে রূপান্তর করা), স্যালারি স্ট্রাকচার ন্যাশনালাইজেশন এবং পরিচালনাগত ব্যয় কমানো। দেশজুড়ে এ পাঁচ ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট আউটলেট এবং ৭৯৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। ওই শাখা, উপশাখা এবং এজেন্ট আউটলেটগুলো সারা দেশে সমন্বয় করাও একটি চ্যালেঞ্জ। এছাড়া আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো কতিপয় অর্থনীতিবিদ ও সাংবাদিক এই মার্জার প্রক্রিয়ার নেতিবাচক দিক জনগণের মাঝে বিভিন্ন উপায়ে উপস্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছে, যাতে এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়।
সম্ভাবনা
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা চিহ্নিত করার জন্য আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি এবং আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং-এই দুই সংস্থার মাধ্যমে ফরেনসিক অডিক করানো হয়।
শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্রমালিকানাধীন নতুন ব্যাংক গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিমুলেশন অনুশীলন (এক্সারসাইজ) করেছে। কোনো জরুরি অবস্থা বা ঘটনার সময় কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে, তা পরীক্ষা করা হয় যে পদ্ধতির মাধ্যমে, সেটাই হচ্ছে সিমুলেশন অনুশীলন। এর ভিত্তিতে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য আগামী ১০ বছর মেয়াদি একটি আর্থিক ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার তদারকি ও নীতি নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বতন্ত্র ‘ইসলামী ব্যাংকিং রেগুলেশন্স অ্যান্ড পলিসি’ বিভাগ গঠন করেছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং আইন তৈরির কাজ চলমান। সরকার ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে একটি আইনি কাঠামো তৈরি করেছে। এই অধ্যাদেশে সংকটপূর্ণ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ‘ডিস্ট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’ গঠন অথবা স্থানীয় বা বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সম্পদ হস্তান্তর করার কথা বলা আছে।

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় ও সরকারি ইসলামী ব্যাংক ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’-এর কার্যক্রম শুরু হলো।
আজ রবিবার (৩০ নভেম্বর) সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ড সভা। এর মাধ্যমে নতুন ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করতে আর কোনো বাধা থাকল না অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
এর আগে অর্থ মন্ত্রণালের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৯ নভেম্বর প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয় সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের। যেখানে আরজিএসসি থেকে কোম্পানি নাম ছাড়পত্র, ব্যাংকের চলতি হিসাব খোলাসহ ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিধিবিধান পূরণের দায়িত্ব পড়ে সরকারের ওপর।
রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের মাধ্যমে ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু হলো। শিগগিরই আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধ, সুদের হার, বতন স্কেলসহ বিস্তারিত স্কিম নির্ধারণ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রসঙ্গত, বিশ্বে ব্যাংক ব্যবস্থা ৬০০ বছর আগে যাত্রা শুরু করলেও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হয় মিসরে ১৯৬৩ সালে। ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের ইসলামী ব্যাংকিং আন্দোলন জোরদার হয়। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশে তা শুরু হয় ১৯৮৩ সালে দেশ-বিদেশি উদ্যোগ ও সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে।
ওআইসি ও আইডিবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী অর্থনীতি ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকব্যবস্থা প্রবর্তন করার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই প্রতিশ্রুতির আলোকে দেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি একীভূতকরণ করে নতুন একটি ব্যাংক তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও ১৭টি প্রচলিত ব্যাংকের ৪১টি ইসলামী ব্যাংকিং শাখা এবং ২১টি প্রচলিত ব্যাংক ৯০৫টি ইসলামী উইন্ডোর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
দেশে ব্যাংক মার্জারের ইতিহাস
বাংলাদেশে ব্যাংক মার্জারের ইতিহাস খুবই সংক্ষিপ্ত। ১৯৭২ সালে ১২টি ব্যাংক একীভূত করে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ২০০৯ সালে ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে একীভূত করে গঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ ১৬ বছর পর একই সময়ে পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক দুর্বল ব্যাংক একীভূত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
চ্যালেঞ্জ
ব্যাংক পরিচালনায় বিগত দিনের দুর্বলতার বদনাম অতিক্রম করে পাঁচটি ব্যাংকে জনগণের আমানত চাহিবামাত্র ফেরত দেয়া এবং আমানত সংগ্রহ, শিল্প, ব্যবসাসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ, প্রবাসী আয় সংগ্রহ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ওই পাঁচটি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা বা বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশ।
অপরদিকে, মোট আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। এই দেনা-পাওনার সমন্বয় করাই কঠিন চ্যালেঞ্জ। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সমস্যায় পড়া পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগকে দেশের অর্থনীতির বিশ্লেষকরা একটি উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন, যা একটি নৈতিক চ্যালেঞ্জ।ব্যাংকগুলোর কোনো শাখা বন্ধ না করে এবং কোনো লোকবল না কমানোর ঘোষণা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ব্যাংক একীভূতকরণের প্রধান চ্যালেঞ্জ আইটি সিস্টেমের ইন্টিগ্রেশন (ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকের ব্যবহূত প্রযুক্তি তথ্যসহ একটিতে রূপান্তর করা), স্যালারি স্ট্রাকচার ন্যাশনালাইজেশন এবং পরিচালনাগত ব্যয় কমানো। দেশজুড়ে এ পাঁচ ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট আউটলেট এবং ৭৯৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। ওই শাখা, উপশাখা এবং এজেন্ট আউটলেটগুলো সারা দেশে সমন্বয় করাও একটি চ্যালেঞ্জ। এছাড়া আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো কতিপয় অর্থনীতিবিদ ও সাংবাদিক এই মার্জার প্রক্রিয়ার নেতিবাচক দিক জনগণের মাঝে বিভিন্ন উপায়ে উপস্থাপনের চেষ্টা করে যাচ্ছে, যাতে এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়।
সম্ভাবনা
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা চিহ্নিত করার জন্য আন্তর্জাতিক অডিট প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি এবং আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং-এই দুই সংস্থার মাধ্যমে ফরেনসিক অডিক করানো হয়।
শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্রমালিকানাধীন নতুন ব্যাংক গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিমুলেশন অনুশীলন (এক্সারসাইজ) করেছে। কোনো জরুরি অবস্থা বা ঘটনার সময় কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে, তা পরীক্ষা করা হয় যে পদ্ধতির মাধ্যমে, সেটাই হচ্ছে সিমুলেশন অনুশীলন। এর ভিত্তিতে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের জন্য আগামী ১০ বছর মেয়াদি একটি আর্থিক ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার তদারকি ও নীতি নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বতন্ত্র ‘ইসলামী ব্যাংকিং রেগুলেশন্স অ্যান্ড পলিসি’ বিভাগ গঠন করেছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিং আইন তৈরির কাজ চলমান। সরকার ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে একটি আইনি কাঠামো তৈরি করেছে। এই অধ্যাদেশে সংকটপূর্ণ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ‘ডিস্ট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’ গঠন অথবা স্থানীয় বা বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সম্পদ হস্তান্তর করার কথা বলা আছে।