ব্রেকিং
বিতরণকৃত ঋণের ৩৪ শতাংশই খেলাপি
বিতরণকৃত ঋণের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ঝুঁকিতে যা ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে—যা ২০০০ সালের পর সর্বোচ্চ। এতে আবারও স্পষ্ট হয়েছে ব্যাংকিং খাতের গভীর সংকট ও দীর্ঘদিনের দুর্বল ব্যবস্থাপনার ফল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের মার্চে নন-পারফর্মিং ঋণের (এনপিএল) হার ছিল ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এক বছর আগে, গত বছরের জুনে এ হার ছিল মাত্র ১২ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করেছে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে গণ্য হয়েছে।

যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলাদাভাবে খেলাপি ঋণের অংক প্রকাশ করেনি, তবু ত্রৈমাসিক হিসাব অনুযায়ী মোট ঋণের তিন ভাগের এক ভাগেরও বেশি এখন ঝুঁকিতে। গত বছরের জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার মতে, খেলাপি ঋণ, রাইট-অফ, পুনঃতফসিলকৃত ও আদালতে আটকে থাকা ঋণসহ মোট ‘ডিস্ট্রেসড অ্যাসেট’ শিগগিরই ১০ লাখ কোটি টাকা ছুঁতে পারে। তাঁদের দাবি—গত ১৬ বছরে ব্যাপক অনিয়ম, প্রতারণা, রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্বল তদারকির কারণেই ব্যাংকিং খাতের এ অবস্থার সৃষ্টি।

বাংলাদেশ ব্যাংক–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের মধ্যে থাকা এস আলম গ্রুপ–সংশ্লিষ্ট কয়েকটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকে অস্বাভাবিক হারে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোও ব্যাংকের ঋণ বিতরণে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। এস আলম ও বেক্সিমকোর মতো বড় ঋণগ্রহীতাদের অনেকে গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হঠাৎ করে খেলাপিতে পরিণত হন, যার প্রভাব পুরো খাতেই পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকের ৩৯ শতাংশ ঋণ খেলাপি যা ১৯ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে, বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক ২ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়েছে যা ঋণের মাত্র ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ইসলামি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের দ্রুত বৃদ্ধি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রথাগতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট (বিআরপিডি) শ্রেণিকৃত ঋণের তথ্য প্রকাশ করে। তবে জুন ত্রৈমাসিকের তথ্য এবার তারা প্রকাশ করেনি। এর পরিবর্তে পরিসংখ্যান বিভাগ সরাসরি ব্যাংকগুলো থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ফলে দুটি বিভাগের তথ্যের মধ্যে অমিল থাকতে পারে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।

এ অবস্থার মধ্যেই খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের জন্য আরও নীতিসহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিরূপমানে থাকা সব ধরনের খেলাপি ঋণ বিশেষ সুবিধায় পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবে। ব্যবসা ও আর্থিক কাঠামো পুনর্গঠনের জন্য এই নতুন ছাড় দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিআরপিডি এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে।