ব্রেকিং
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নীরব বিপ্লব: আমানতে শীর্ষে ইসলামী ব্যাংক, ঋণে এগিয়ে ব্র্যাক
২০১৪ সালে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে সীমিত আকারে শুরু হওয়া এজেন্ট ব্যাকিং সেবা বর্তমানে সারা দেশে ৩০টি ব্যাংকের মাধ্যমে বিস্তৃত হয়েছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থানের সংকোচন ও মানুষের সঞ্চয় কমে যাওয়ার মধ্যেও দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং বিস্তৃত হয়েছে নীরব বিপ্লবের মতো। ব্যাংকের শাখায় না গিয়েও গ্রাহককে আর্থিক সেবা দেওয়ার এ পদ্ধতি এক দশকে বদলে দিয়েছে গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলের ব্যাংকিং চিত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গ্রাহক সংখ্যা, আমানত, ঋণ বিতরণ থেকে শুরু করে রেমিট্যান্স আহরণ—সব ক্ষেত্রেই রেকর্ড তৈরি করেছে এজেন্ট ব্যাংকিং।

২০১৪ সালে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে সীমিত আকারে শুরু হওয়া সেবা বর্তমানে ৩০টি ব্যাংকের মাধ্যমে বিস্তৃত হয়েছে সারা দেশে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের ধাক্কায় গত বছর কিছুটা গতি কমলেও এ সেবার বিস্তার বাড়ছেই। ব্যাংকাররাও বলছেন, নতুন গ্রাহক পাওয়া এবং গ্রাম থেকে আমানত সংগ্রহে এজেন্ট নেটওয়ার্ক কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ হয়েছে ৪৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে একাই ইসলামী ব্যাংক সংগ্রহ করেছে ২১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে ঋণ বিতরণে শীর্ষে ব্র্যাক ব্যাংক; একই সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মোট ঋণ বিতরণ ছিল ৩১ হাজার ৯১০ কোটি টাকা, যার ২২ হাজার ৭১২ কোটি বিতরণ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।

বর্তমানে দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা ২ কোটি ৫১ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি। ডাচ–বাংলা ব্যাংক একাই পরিচালনা করছে ৭৬ লাখ ১৩ হাজারেরও বেশি হিসাব। দ্বিতীয় অবস্থানে ব্যাংক এশিয়া ৭৪ লাখ ৩৫ হাজার হিসাব নিয়ে। ইসলামী ব্যাংকের হিসাবসংখ্যা ৫৬ লাখ ১০ হাজারের বেশি।

আউটলেট বা সেবা কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও ডাচ–বাংলা এগিয়ে—৫ হাজার ৬২০টি। ব্যাংক এশিয়ার রয়েছে ৫ হাজার ৩৫টি, আর ইসলামী ব্যাংকের আউটলেট ২ হাজার ৭৯২টি।

ব্যাংকাররা বলছেন, এজেন্ট নেটওয়ার্ক প্রান্তিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ায় আমানত সংগ্রহ সহজ হয়েছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে আতঙ্কে গত বছরের ৫ আগস্টের পর একসময় আমানত কমে যায়। পরে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে আবার বাড়তে শুরু করে। তাদের মতে, আমানত বাড়লেও ঋণ বাড়েনি প্রত্যাশানুযায়ী। তারল্য সংকট ও বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের কারণে ঋণ বিতরণে সতর্কতা বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং ঋণেও।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের পথিকৃৎ ব্যাংক এশিয়া শুরু থেকেই সেবাটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন সিটিজেন জার্নালকে বলেন, ‘গত বছরের আগস্টে দেশে যে পরিবর্তন হয়েছে, তার প্রভাব এজেন্ট ব্যাংকিংয়েও পড়েছে। সার্বিকভাবে সেবার গতি কিছুটা কমেছে। এখন আমরা সেবাটি আরও বিস্তৃত করার পাশাপাশি নতুন সুবিধা চালু করছি।’

তিনি জানান, এজেন্ট ব্যাংকিং আমানতের সঙ্গে বিমা সুবিধা যুক্ত করা হচ্ছে, যা গ্রাহকেরা বিনা খরচে পাবেন। এছাড়া কাঁচাবাজার ও ভাসমান বাজারে নতুন এজেন্ট যুক্ত করার উদ্যোগও নিয়েছে ব্যাংকটি। ‘ব্যাংকিং সময়ের বাইরে যেসব বাজারে লেনদেন হয়, সেখানে এজেন্টদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া যাবে,’ বলেন তিনি।

একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অনেক ব্যাংক গ্রাম থেকে আমানত সংগ্রহ করে সেগুলো করপোরেট ঋণে ব্যবহার করছে। তাদের মতে, রিমোট এলাকায় ব্যাংকের নতুন শাখা খোলার চেয়ে এজেন্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করা সহজ ও সাশ্রয়ী হওয়ায় এ সেবার জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ১১ বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং শুধু ব্যাংকিং সেবাকেই নয়, গ্রামীণ অর্থনীতিকেও গতিশীল করেছে। ভবিষ্যতে প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়ে এটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তারা।