ব্রেকিং
ভরা মৌসুমেও কমছে না 
শীতের সবজির দাম
শীতকালীন সবজিতে ভরপুর বাজার

শীতকালীন সবজিতে ভরপুর কাঁচা বাজার। শীতের আমেজ এলেও রাজধানীর সবজির বাজারে নেই স্বস্তি- বরং বেশিরভাগ পণ্যের দামই আগের তুলনায় ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। আলুর বস্তা প্রতি ৪০০ টাকা বাড়ায় খুচরায় আলু এখন ৩০ টাকা কেজি।

দেশি টমেটো বাজারে আসলেও দাম ১৬০ টাকা। আর পেঁয়াজের বাজার ১১০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, রাজধানীর বাজারগুলোতে কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। তবে মুরগি ও ডিমের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কম থাকায় সাধারণ ক্রেতারা আপাতত এ দুই পণ্যের ওপরই নির্ভর করছেন।

আজ শুক্রবার রাজধানীর খিলগাও কাঁচাবাজার, শান্তিনগর, মতিঝিল এজিবি কলোনী কাঁচাবাজর, মালিবাগ কাঁচাবাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় আজকে সবজির দাম তেমনটা বাড়েনি। কিছুটা কমেছে। শীতকালীন সব সবজি বাজারের আসায় সবজির দামটা তুলনামূলক ভাবে কমছে। টমেটোর দাম প্রথমদিকে একটু বেশি থাকে। কিন্তু সময় আরো গেলে সেটাও সস্তা হয়ে যাবে। দেশি বড় টমেটো ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও ১২০ -১৪০ টাকা ছোট টমেটো।

বাজারে মানভেদে ফুলকপি প্রতিপিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৮০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও পটোল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা, শালগম ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা গুণতে হবে ক্রেতাদের।

এ ছাড়া লাউ প্রতিপিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লেবু ৬০ টাকা ডজন, আলু ২০ থোকে ২৫ টাকা কেজি, ধনে পাতা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সকালে সবজি বিক্রেতা আনিসুল হক বলেন, সবজীর দাম কিছুটা কমেছে। এখনো ১০০ টাকার নিচে কম সবজি পাওয়া যায়। কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা প্রতিটি সবজির দাম। ফুলকপি, বাঁধাকপি বাজারে আসার কারণে কিছুটা সবজির দাম কমেছে। বিভিন্ন শাকের দামও কম আছে। আগে ২০ টাকা ৩০ টাকা আর্টব বিক্রয় হলেও, এখন ১০ থেকে ১৫টাকাটি বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর প্রতিটি বাজারে ১১০ থেকে ১২০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। ৯০ থেকে ১০০ টাকা পাইকারি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকার পরও পাইকারি দাম কমছে না। আমাদের বেশি দামে কিনতে হয় তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পুঁইশাক ২০-৩০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০, কলমি শাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়।

মালিবাগ কাঁচাবাজরে সবজি কিনতে আসা জাহানারা বেগম বলেন, শীতকালীন সব সবজিই আছে। দামটা এখনো কম না। অনেক সবজীর দাম হয়তো কমেছে। তবে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আরো কমলে ভালো হয়।

পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছেই

প্রায় এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। বর্তমানে প্রতি কেজি ১২০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দাম ছিল ৬০-৭০ টাকা। দাম সহনীয় রাখতে ভারতসহ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানির ঘোষণা দেয় সরকার। তবে, আবেদনের সংখ্যার তুলনায় খুব একটা হয়নি ঋণপত্র (এলসি) খোলা। এদিকে পেঁয়াজ কিনতে বাড়তি টাকা খরচ হওয়ায় বাজার থেকে অন্য কিছু কম কিনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে ক্রেতারা।

মাছের বাজারে চড়া দাম

রাজধানীর বাজারগুলোতে কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন খাল-নদীর পানি শুকিয়ে আসতে শুরু করায় এবং পর্যাপ্ত সামুদ্রিক মাছ বাজারে না আসায় বাড়তি দাম গুণতে হচ্ছে আড়তদারেরও।

বাজারে চাষের রুই-কাতলা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়। পাবদা ছোট সাইজের ৪০০ টাকা, মাঝারি সাইজের ৫০০- ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিং ৪০০- ৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০- ৭০০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০- ৪৫০ টাকা, পুঁটি ২০০- ২৫০ টাকা। তেলাপিয়া ২৫০–৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০- ২৮০ টাকা এবং পাঙাশ ও সিলভার কার্প ২০০- ২৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

সামুদ্রিক মাছের মধ্যে লইট্যা ২৫০-৩০০ টাকা হলেও কোরাল ৭০০- ৯০০ টাকা এবং আইড় ৬০০–৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাগদা ও গলদা চিংড়ি প্রকারভেদে ৭৫০ থেকে ১,২০০ টাকার মধ্যে মিলছে। ইলিশের দামও অপরিবর্তিত– দুই কেজি ওজনের মাছ ২,৬০০- ৩,০০০ টাকা, এক কেজির ইলিশ ২,২০০–২,৫০০ টাকা এবং ছোট জাটকা ৫০০- ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে মুরগি ও ডিমের দাম সপ্তাহজুড়ে কিছুটা কম থাকায় এ খাতে ভরসা মিলছে ক্রেতাদের। যেকারণে ব্রয়লার মুরগির দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ও তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে।

মুরগি-ডিমে কিছুটা স্বস্তি

ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৬০- ১৬৫ টাকা, সোনালি ২৯০- ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল ডিম ডজনপ্রতি ১২০ টাকা, সাদা ১২০- ১২৫ টাকা এবং হাঁসের ডিম ১৯০-২০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে গরু-খাসির মাংসের বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই। গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১,২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে মাছের দাম তুলনামূলক একটু বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতা মাছের বদলে ব্রয়লার মুরগি কিনেই বাসায় ফিরছেন।

মতিঝিল এজিবি কলোনী কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা মনি হায়দার জানান, রুই- কাতলার দামেও এখন আর আগের মতো স্বস্তি নেই। মাঝারি সাইজের যে কোনও মাছ কিনলেই ৪০০- ৫০০ টাকা লেগে যায়। দেশি বা নদী-নালার মাছে তো হাত দেয়ার মতো অবস্থা নেই। এর চেয়ে বরং ব্রয়লার মুরগিই ভালো। পোলট্রি বিক্রেতাদের দাবি, ফিড ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দাম পুরোপুরি আগের স্তরে নামানো কঠিন। একই বাজারের মুরগির বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, ব্রয়লার মোটামুটি ঠিক আছে। দাম কিছুটা কম থাকলে আমাদের বিক্রিও ভালো হয়।