আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যুব বেকার তৈরি করছে
শুধুমাত্র গণতন্ত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারবে না: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

শুধুমাত্র গণতন্ত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারবে না: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক

শুধুমাত্র গণতন্ত্রের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজনীতি যদি জনকল্যাণমুখী না হয়ে শুধু সুযোগ-সুবিধা দেয়ার মতো হয়ে যায়, তাহলে যুবসমাজ ক্যাডারভিত্তিক জীবিকা অর্জনের পথ হিসেবে রাজনীতিকেই বেছে নেবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
তিনি মনে করেন, অবৈধ আয় কমাতে গেলে দিন শেষে তা রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তা না হলে একটি উৎস বন্ধ করলে আরেকটি উৎস চালু হয়ে যায়।
এছাড়া সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী একটি সুবিধাভোগী বলয় তৈরি করে জনকল্যাণমুখী নীতি নির্ধারণে বাধা সৃষ্টি করবে বলেও জানান তিনি। পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যুব বেকার তৈরি করছে। এজন্য শুধু রাজনীতি এককভাবে সব কিছু উন্নত করতে পারবে না। আচরণবিধি ও মূল্যবোধ কিভাবে তৈরি হয় তা নিয়েও গবেষণা করতে হবে।
আজ রবিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এ কথাগুলো বলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
প্রধান অতিথি হিসেবে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পর্যটন ভবনে অনুষ্ঠিত দুই দিনের সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক প্রফেসর এ.কে. এনামুল হক। এ বছরের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হলো, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন।
মূল প্রবন্ধে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অশুভ সংস্কৃতি গড়ে উঠলে শুধু প্রশাসনিক সংস্কার দিয়ে সমাধান হবে না। ভারতে ঘুষ নেয়ার মতো দেয়াটা অপরাধ হলেও আমাদের দেশে দেয়াটা অপরাধ বলে মনে করা হয় না।
ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী লক্ষ্য ছিল ৩টি বিষয়: কার্যকর জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটানো। সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে এবং গুণগত উন্নয়ন, যা ন্যায্য সমাজ, বৈষম্যহীন ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গঠনে ভূমিকা রাখবে। তবে এখন সীমিত প্রত্যাশা হলো কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। দুঃখজনক বিষয় হলো স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পার হলেও কার্যকর গণতন্ত্রকে সীমিত লক্ষ্য হিসেবে দেখা। তবুও নতুন দেশে টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরো বলেন, দ্বৈতভাবে গঠিত সরকারের দ্বৈতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হওয়ায় আমার গবেষণার সুযোগ সীমিত। তবে এটুকু বলতে পারি, এতদিন থেকে যে বিষয়গুলো দেখেছি তা বদলাতে হবে। কিন্তু কিছু সংস্কার দিয়ে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। যেমন, ব্যবসায়ী ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে যদি অশুভ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তাহলে শুধু প্রশাসনিক সংস্কার দিয়ে কিছু হবে না। কর ফাঁকি রোধে অনলাইনে কর দেয়ার বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বড় বড় কর ফাঁকি অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে হবে না। এজন্য আরো বড় সংস্কার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিধিবিধান বাস্তবসম্মত না হলে আরো বেশি রেন্ট সেকিং বা অবৈধ সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশে ঘুষ নেওয়া অপরাধ হলেও দেওয়াটা অপরাধ না হলেও কেউ ঘুস দিয়ে প্রকাশ করে না, কারণ উভয়েরই স্বার্থ জড়িত।
অবৈধ সম্পদ উপার্জনের চাহিদা রাজনীতিতে থাকলে শুধু বিধিবিধান দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এক অনিয়ম বন্ধ করলে অন্য উৎস খুঁজে নেওয়া হবে। এজন্য আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে ন্যায্য ও বৈষম্যহীন অর্থনীতির বিষয় থাকতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিস্তারিতভাবে থাকতে হবে। পৃথিবীর কোনো দেশ এত গরিব নয় যে সব নাগরিকের চাহিদা মেটাতে পারবে না। তবে এজন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা ও অর্থনৈতিক সঠিক কাঠামো।
এর আগে স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক এ কে এম এনামুল হক বলেন, দুই দিনের গবেষণা সম্মেলনে প্রায় অর্ধশতাধিক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে নানা বিষয় উঠে আসবে। আমাদের যুব বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বাড়ছে এবং স্বাস্থ্য খাতে নানা সংকট আছে। এসব বিষয় আলোচনার মাধ্যমে উঠে আসবে।’
উদ্বোধনী অধিবেশনের পর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আরেক অধিবেশনে চারটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মন্ডল।
আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগের অনেক প্রকল্প পরিচালক চলে গেছেন; কারো বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাই নতুন প্রকল্প পরিচালক পাওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমান মেয়াদের আগেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তখনকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, সে সময় বললেই কাজ হয়ে যেত। সচিব ছিলেন আকবর আলি খান ও সা’দত হুসাইন। কিন্তু এখন বললেই হয় না; কোথায় সমস্যা আছে, তা নিজেকেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ও বুঝতে হয়।

শুধুমাত্র গণতন্ত্রের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজনীতি যদি জনকল্যাণমুখী না হয়ে শুধু সুযোগ-সুবিধা দেয়ার মতো হয়ে যায়, তাহলে যুবসমাজ ক্যাডারভিত্তিক জীবিকা অর্জনের পথ হিসেবে রাজনীতিকেই বেছে নেবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
তিনি মনে করেন, অবৈধ আয় কমাতে গেলে দিন শেষে তা রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তা না হলে একটি উৎস বন্ধ করলে আরেকটি উৎস চালু হয়ে যায়।
এছাড়া সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী একটি সুবিধাভোগী বলয় তৈরি করে জনকল্যাণমুখী নীতি নির্ধারণে বাধা সৃষ্টি করবে বলেও জানান তিনি। পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যুব বেকার তৈরি করছে। এজন্য শুধু রাজনীতি এককভাবে সব কিছু উন্নত করতে পারবে না। আচরণবিধি ও মূল্যবোধ কিভাবে তৈরি হয় তা নিয়েও গবেষণা করতে হবে।
আজ রবিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এ কথাগুলো বলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
প্রধান অতিথি হিসেবে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পর্যটন ভবনে অনুষ্ঠিত দুই দিনের সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক প্রফেসর এ.কে. এনামুল হক। এ বছরের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হলো, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন।
মূল প্রবন্ধে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অশুভ সংস্কৃতি গড়ে উঠলে শুধু প্রশাসনিক সংস্কার দিয়ে সমাধান হবে না। ভারতে ঘুষ নেয়ার মতো দেয়াটা অপরাধ হলেও আমাদের দেশে দেয়াটা অপরাধ বলে মনে করা হয় না।
ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী লক্ষ্য ছিল ৩টি বিষয়: কার্যকর জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটানো। সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে এবং গুণগত উন্নয়ন, যা ন্যায্য সমাজ, বৈষম্যহীন ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গঠনে ভূমিকা রাখবে। তবে এখন সীমিত প্রত্যাশা হলো কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। দুঃখজনক বিষয় হলো স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পার হলেও কার্যকর গণতন্ত্রকে সীমিত লক্ষ্য হিসেবে দেখা। তবুও নতুন দেশে টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরো বলেন, দ্বৈতভাবে গঠিত সরকারের দ্বৈতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হওয়ায় আমার গবেষণার সুযোগ সীমিত। তবে এটুকু বলতে পারি, এতদিন থেকে যে বিষয়গুলো দেখেছি তা বদলাতে হবে। কিন্তু কিছু সংস্কার দিয়ে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। যেমন, ব্যবসায়ী ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে যদি অশুভ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তাহলে শুধু প্রশাসনিক সংস্কার দিয়ে কিছু হবে না। কর ফাঁকি রোধে অনলাইনে কর দেয়ার বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বড় বড় কর ফাঁকি অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে হবে না। এজন্য আরো বড় সংস্কার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিধিবিধান বাস্তবসম্মত না হলে আরো বেশি রেন্ট সেকিং বা অবৈধ সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশে ঘুষ নেওয়া অপরাধ হলেও দেওয়াটা অপরাধ না হলেও কেউ ঘুস দিয়ে প্রকাশ করে না, কারণ উভয়েরই স্বার্থ জড়িত।
অবৈধ সম্পদ উপার্জনের চাহিদা রাজনীতিতে থাকলে শুধু বিধিবিধান দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এক অনিয়ম বন্ধ করলে অন্য উৎস খুঁজে নেওয়া হবে। এজন্য আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে ন্যায্য ও বৈষম্যহীন অর্থনীতির বিষয় থাকতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিস্তারিতভাবে থাকতে হবে। পৃথিবীর কোনো দেশ এত গরিব নয় যে সব নাগরিকের চাহিদা মেটাতে পারবে না। তবে এজন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা ও অর্থনৈতিক সঠিক কাঠামো।
এর আগে স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক এ কে এম এনামুল হক বলেন, দুই দিনের গবেষণা সম্মেলনে প্রায় অর্ধশতাধিক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে নানা বিষয় উঠে আসবে। আমাদের যুব বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বাড়ছে এবং স্বাস্থ্য খাতে নানা সংকট আছে। এসব বিষয় আলোচনার মাধ্যমে উঠে আসবে।’
উদ্বোধনী অধিবেশনের পর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আরেক অধিবেশনে চারটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মন্ডল।
আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগের অনেক প্রকল্প পরিচালক চলে গেছেন; কারো বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাই নতুন প্রকল্প পরিচালক পাওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমান মেয়াদের আগেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তখনকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, সে সময় বললেই কাজ হয়ে যেত। সচিব ছিলেন আকবর আলি খান ও সা’দত হুসাইন। কিন্তু এখন বললেই হয় না; কোথায় সমস্যা আছে, তা নিজেকেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ও বুঝতে হয়।

শুধুমাত্র গণতন্ত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারবে না: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক

শুধুমাত্র গণতন্ত্রের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজনীতি যদি জনকল্যাণমুখী না হয়ে শুধু সুযোগ-সুবিধা দেয়ার মতো হয়ে যায়, তাহলে যুবসমাজ ক্যাডারভিত্তিক জীবিকা অর্জনের পথ হিসেবে রাজনীতিকেই বেছে নেবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
তিনি মনে করেন, অবৈধ আয় কমাতে গেলে দিন শেষে তা রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তা না হলে একটি উৎস বন্ধ করলে আরেকটি উৎস চালু হয়ে যায়।
এছাড়া সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী একটি সুবিধাভোগী বলয় তৈরি করে জনকল্যাণমুখী নীতি নির্ধারণে বাধা সৃষ্টি করবে বলেও জানান তিনি। পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা যুব বেকার তৈরি করছে। এজন্য শুধু রাজনীতি এককভাবে সব কিছু উন্নত করতে পারবে না। আচরণবিধি ও মূল্যবোধ কিভাবে তৈরি হয় তা নিয়েও গবেষণা করতে হবে।
আজ রবিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এ কথাগুলো বলেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
প্রধান অতিথি হিসেবে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পর্যটন ভবনে অনুষ্ঠিত দুই দিনের সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক প্রফেসর এ.কে. এনামুল হক। এ বছরের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হলো, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন।
মূল প্রবন্ধে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অশুভ সংস্কৃতি গড়ে উঠলে শুধু প্রশাসনিক সংস্কার দিয়ে সমাধান হবে না। ভারতে ঘুষ নেয়ার মতো দেয়াটা অপরাধ হলেও আমাদের দেশে দেয়াটা অপরাধ বলে মনে করা হয় না।
ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী লক্ষ্য ছিল ৩টি বিষয়: কার্যকর জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটানো। সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে এবং গুণগত উন্নয়ন, যা ন্যায্য সমাজ, বৈষম্যহীন ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গঠনে ভূমিকা রাখবে। তবে এখন সীমিত প্রত্যাশা হলো কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। দুঃখজনক বিষয় হলো স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পার হলেও কার্যকর গণতন্ত্রকে সীমিত লক্ষ্য হিসেবে দেখা। তবুও নতুন দেশে টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরো বলেন, দ্বৈতভাবে গঠিত সরকারের দ্বৈতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হওয়ায় আমার গবেষণার সুযোগ সীমিত। তবে এটুকু বলতে পারি, এতদিন থেকে যে বিষয়গুলো দেখেছি তা বদলাতে হবে। কিন্তু কিছু সংস্কার দিয়ে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। যেমন, ব্যবসায়ী ও আমলাতন্ত্রের মধ্যে যদি অশুভ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তাহলে শুধু প্রশাসনিক সংস্কার দিয়ে কিছু হবে না। কর ফাঁকি রোধে অনলাইনে কর দেয়ার বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু বড় বড় কর ফাঁকি অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে হবে না। এজন্য আরো বড় সংস্কার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিধিবিধান বাস্তবসম্মত না হলে আরো বেশি রেন্ট সেকিং বা অবৈধ সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশে ঘুষ নেওয়া অপরাধ হলেও দেওয়াটা অপরাধ না হলেও কেউ ঘুস দিয়ে প্রকাশ করে না, কারণ উভয়েরই স্বার্থ জড়িত।
অবৈধ সম্পদ উপার্জনের চাহিদা রাজনীতিতে থাকলে শুধু বিধিবিধান দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এক অনিয়ম বন্ধ করলে অন্য উৎস খুঁজে নেওয়া হবে। এজন্য আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে ন্যায্য ও বৈষম্যহীন অর্থনীতির বিষয় থাকতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিস্তারিতভাবে থাকতে হবে। পৃথিবীর কোনো দেশ এত গরিব নয় যে সব নাগরিকের চাহিদা মেটাতে পারবে না। তবে এজন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা ও অর্থনৈতিক সঠিক কাঠামো।
এর আগে স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক এ কে এম এনামুল হক বলেন, দুই দিনের গবেষণা সম্মেলনে প্রায় অর্ধশতাধিক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে নানা বিষয় উঠে আসবে। আমাদের যুব বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বাড়ছে এবং স্বাস্থ্য খাতে নানা সংকট আছে। এসব বিষয় আলোচনার মাধ্যমে উঠে আসবে।’
উদ্বোধনী অধিবেশনের পর পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আরেক অধিবেশনে চারটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ এম এ সাত্তার মন্ডল।
আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগের অনেক প্রকল্প পরিচালক চলে গেছেন; কারো বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাই নতুন প্রকল্প পরিচালক পাওয়া যাচ্ছে না।
বর্তমান মেয়াদের আগেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তখনকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, সে সময় বললেই কাজ হয়ে যেত। সচিব ছিলেন আকবর আলি খান ও সা’দত হুসাইন। কিন্তু এখন বললেই হয় না; কোথায় সমস্যা আছে, তা নিজেকেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ও বুঝতে হয়।