ব্রেকিং
রাবির দ্বাদশ সমাবর্তন; বর্জনের ঘোষণা একাংশের
রাবির সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের একাংশের। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ৬০, ৬১ ও ৬২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একাংশ। পুনরায় রেজিস্ট্রেশনের সুযোগসহ তিন দফা দাবি উপেক্ষিত হওয়ায় শনিবার (০৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন ব্যাচগুলোর প্রতিনিধিরা।

তারা জানান, সমাবর্তন আয়োজনের তারিখ, অতিথি নির্বাচন ও পুনরায় রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ— এই তিন দফা দাবি তারা এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছেন। ৩০ নভেম্বর উপাচার্য, দুই উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও ছাত্র উপদেষ্টার অফিসিয়াল মেইলে এ স্মারকলিপি পাঠানো হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২৩ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিলম্বের পর এখন জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগে ১৭ ডিসেম্বর সমাবর্তনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই সময়টিতে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক কাজের চাপ থাকে; সরকারি ও বেসরকারি অফিসেও বিজয় দিবসকে ঘিরে নানা কর্মসূচি থাকে। ফলে সপ্তাহের মাঝামাঝি এমন দিনে সমাবর্তন করা অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে অংশ নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, অতিথি নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মতামত বিবেচনা করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও ঐতিহ্যের জায়গা থেকে তারা রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানকে অতিথি করার দাবি জানিয়েছেন— অথবা নির্বাচনের পরে নতুন সরকারের প্রধানকে অতিথি করার অনুরোধ করেছেন।

এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী নানা সীমাবদ্ধতার কারণে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি জানিয়ে তারা পুনরায় রেজিস্ট্রেশন সুযোগ উন্মুক্ত করার দাবি করেন।

অতিরিক্ত দাবি হিসেবে শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনের জন্য জমা দেওয়া ফি কোন ব্যাংকে রাখা হয়েছে, কত লভ্যাংশ পাওয়া গেছে এবং পুরো সমাবর্তনের বাজেট–হিসাব প্রকাশের দাবি জানান।

তারা বলেন, উপাচার্য (শিক্ষা) ফরিদ খান স্যার আমাদের দাবি পূরণে অপারগতার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কোনও যুক্তিসঙ্গত দাবি বিবেচনায় নেয়নি।

এসময়, ৬১ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, এই সমাবর্তনে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চাই। বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তিনি অংশগ্রহণ করলে রাবির এই দ্বাদশ সমাবর্তনে কেন থাকবেন না। আমি মনে করি, এই ব্যার্থতা প্রশাসনের।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই দাবির বিপরীতে যদি প্রশাসন সমাবর্তনের আয়োজন করে তাহলে পরবর্তীতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্যও প্রশাসনই দায়ী থাকবে। আমরা আশা করি প্রশাসন ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে। একইসঙ্গে আমরা আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সমাবর্তন বর্জনের কর্মসূচি চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

৬০ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাসেল কবির বলেন, আমরা মেসেঞ্জার গ্রুপে সবার মতামত নিয়েছি। সবাই সমাবর্তন পেছাতে চায়। আমরা সবাই ছুটির দিনে সমাবর্তন করতে চাই। ছুটির দিনে যদি সমাবর্তন করা না যায় তাহলে আমাদের শতকরা ৮০ ভাগ প্রাক্তন শিক্ষার্থী আসতে পারবে না। তাই আমরা একটি যৌক্তিক সময়ে সমাবর্তন করার জন্য প্রশাসনকে আহ্বান জানাই। প্রশাসন যদি আমাদের দাবিকে গুরুত্ব না দেয় তাহলে আমরা সমাবর্তন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রশাসন নির্ধারিত তারিখেই সমাবর্তন আয়োজন করলে সেক্ষেত্রে ক্যাম্পাসে যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায় তাহলে এর দায়ভার প্রশাসনকেই নিতে হবে।

উল্লেখ্য, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সমাবর্তন বর্জনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে তারা আরও জানান— প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ ব্যাচের রাসেল কবির, ৬১ ব্যাচের মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন ও মো. আব্দুল্লাহ।