সাজসজ্জার নামে রাষ্ট্রের ক্ষতি
দুদকের জালে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো সাবেক রাষ্ট্রপতি

দুদকের জালে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো সাবেক রাষ্ট্রপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী সরকারের আমলে টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতি থাকা আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে নিজ ভবন সংলগ্ন এলাকায় সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠেছে। শুধু অভিযোগ নয়, যাচাই-বাছাই শেষে তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তও নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশের ইতিহাসে সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রথম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দুদকের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তাকে সাজাও ভোগ করতে হয়েছিল। আবদুল হামিদ হচ্ছেন দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, যিনি দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মুখোমুখি হচ্ছেন।
গতকাল রবিবার বিকেলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান, সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, রাজধানীর অভিজাত নিকুঞ্জ এলাকার লেক ড্রাইভ রোডের ৬ নম্বর প্লটে ৩ তলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে আব্দুল হামিদের। রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব শেষে তিনি ২০২৩ সালের এপ্রিলে সপরিবারে ওই বাড়িতে ওঠেন।
অভিযোগ উঠেছে, বাড়ির দুপাশের রাস্তায় হাঁটার জন্য বাঁধা, নান্দনিক ডেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ, খালসংলগ্ন অত্যাধুনিক ল্যাম্পপোস্ট নির্মাণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। গত ১৮ নভেম্বর এ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান তিনি।
মহাপরিচালক আক্তার হোসেন আরো বলেন, দুদক কখনো ব্যক্তির পরিচয় দেখে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত করে না। এখানে দেখার বিষয় হলো- অভিযোগের বস্তুনিষ্ঠতা এবং তা দুদকের তফসিলভুক্ত কিনা। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যে কোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কমিশন।
জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকা নিকুঞ্জের লেকড্রাইভ রোডের ৬ নম্বর প্লটে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের তিন তলাবিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। যেখানে তিনি রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে উঠেছিলেন। যদিও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সেই বাসা ছেড়ে দেন তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রপতির তিন তলা ডুপ্লেক্স বাড়ি
অভিযোগ রয়েছে, আবদুল হামিদ তার ওই আবাসিক ভবনের দুই পাশের রাস্তা হাঁটার (ওয়াকওয়ে) জন্য বাঁধিয়েছেন। নান্দনিক ডিজাইনে তৈরি ডেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ থেকে শুরু করে খালসংলগ্ন রাস্তায় অত্যাধুনিক ল্যাম্প পোস্ট সবই তৈরি করা হয়েছিল তার সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে। প্রকল্পের অংশ না হলেও, পূর্বাচল নতুন শহর ঘিরে একশ ফুট চওড়া খাল খনন প্রকল্পের আওতায় খালটি সংস্কার করা হয়। রাজউকের তত্ত্বাবধানে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। যেখানে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়।
জানা যায়, রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে ১০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিলে আবদুল হামিদ সপরিবারে নিকুঞ্জের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এরপর এলাকাটি রীতিমতো নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া সাধারণের প্রবেশে ব্যাপকভাবে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। তবে পট পরিবর্তনের পর আলোচিত বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত হয়ে রয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এমপি কোটায় নিকুঞ্জ-১ (দক্ষিণ) আবাসিক এলাকায় প্লট বরাদ্দের আবেদন করেন আবদুল হামিদ। সে অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ৫ অক্টোবর তাকে তিন কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালে সেখানে বাড়ি নির্মাণের জন্য তিনি নকশা অনুমোদন নেন। মোট সাড়ে চার লাখ টাকায় প্লট রেজিস্ট্রি করেন আবদুল হামিদ।
রাজউক ও দুদক সূত্রে জানা যায়, নিকুঞ্জ-১ এলাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ছাড়াও আওয়ামীলীগ সরকারের একাধিক এমপি-মন্ত্রীসহ দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা এবং শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট ব্যবসায়ীদের অনেকে ওই এলাকায় চোখ ধাঁধানো ডিজাইনের বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাদের মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়ির পাশেই সাত নম্বর প্লটে বাড়ি করেছেন পলাতক সাবেক হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। চার নম্বর রোডের তিন নম্বর বাড়ির মালিক মোহাম্মদ হোসেন সেরনিয়াবাত।
এছাড়া শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস সেক্রেটারি নাঈমুল ইসলাম খান, সাংবাদিক নেতা ও হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিবি হারুনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারী, শেখ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য এবং দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও বিমা খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী কবির হোসেন ওরফে শেখ কবির এবং সুইডেন আওয়ামী লীগের নেতা বিতর্কিত ব্যবসায়ী কাজী শাহ আলম ওরফে ফুল শাহ আলম নিকুঞ্জ এলাকায় বাড়ি করেছেন।
এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক পাশ্চাত্য নির্মাণশৈলীতে তৈরি সারি সারি ডুপ্লেক্স বাড়ি। সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে যারা প্রভাবশালী তাদের বেশিরভাগই এখন পলাতক বলে জানা গেছে।

আওয়ামী সরকারের আমলে টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতি থাকা আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে নিজ ভবন সংলগ্ন এলাকায় সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠেছে। শুধু অভিযোগ নয়, যাচাই-বাছাই শেষে তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তও নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশের ইতিহাসে সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রথম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দুদকের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তাকে সাজাও ভোগ করতে হয়েছিল। আবদুল হামিদ হচ্ছেন দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, যিনি দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মুখোমুখি হচ্ছেন।
গতকাল রবিবার বিকেলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান, সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, রাজধানীর অভিজাত নিকুঞ্জ এলাকার লেক ড্রাইভ রোডের ৬ নম্বর প্লটে ৩ তলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে আব্দুল হামিদের। রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব শেষে তিনি ২০২৩ সালের এপ্রিলে সপরিবারে ওই বাড়িতে ওঠেন।
অভিযোগ উঠেছে, বাড়ির দুপাশের রাস্তায় হাঁটার জন্য বাঁধা, নান্দনিক ডেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ, খালসংলগ্ন অত্যাধুনিক ল্যাম্পপোস্ট নির্মাণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। গত ১৮ নভেম্বর এ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান তিনি।
মহাপরিচালক আক্তার হোসেন আরো বলেন, দুদক কখনো ব্যক্তির পরিচয় দেখে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত করে না। এখানে দেখার বিষয় হলো- অভিযোগের বস্তুনিষ্ঠতা এবং তা দুদকের তফসিলভুক্ত কিনা। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যে কোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কমিশন।
জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকা নিকুঞ্জের লেকড্রাইভ রোডের ৬ নম্বর প্লটে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের তিন তলাবিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। যেখানে তিনি রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে উঠেছিলেন। যদিও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সেই বাসা ছেড়ে দেন তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রপতির তিন তলা ডুপ্লেক্স বাড়ি
অভিযোগ রয়েছে, আবদুল হামিদ তার ওই আবাসিক ভবনের দুই পাশের রাস্তা হাঁটার (ওয়াকওয়ে) জন্য বাঁধিয়েছেন। নান্দনিক ডিজাইনে তৈরি ডেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ থেকে শুরু করে খালসংলগ্ন রাস্তায় অত্যাধুনিক ল্যাম্প পোস্ট সবই তৈরি করা হয়েছিল তার সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে। প্রকল্পের অংশ না হলেও, পূর্বাচল নতুন শহর ঘিরে একশ ফুট চওড়া খাল খনন প্রকল্পের আওতায় খালটি সংস্কার করা হয়। রাজউকের তত্ত্বাবধানে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। যেখানে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়।
জানা যায়, রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে ১০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিলে আবদুল হামিদ সপরিবারে নিকুঞ্জের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এরপর এলাকাটি রীতিমতো নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া সাধারণের প্রবেশে ব্যাপকভাবে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। তবে পট পরিবর্তনের পর আলোচিত বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত হয়ে রয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এমপি কোটায় নিকুঞ্জ-১ (দক্ষিণ) আবাসিক এলাকায় প্লট বরাদ্দের আবেদন করেন আবদুল হামিদ। সে অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ৫ অক্টোবর তাকে তিন কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালে সেখানে বাড়ি নির্মাণের জন্য তিনি নকশা অনুমোদন নেন। মোট সাড়ে চার লাখ টাকায় প্লট রেজিস্ট্রি করেন আবদুল হামিদ।
রাজউক ও দুদক সূত্রে জানা যায়, নিকুঞ্জ-১ এলাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ছাড়াও আওয়ামীলীগ সরকারের একাধিক এমপি-মন্ত্রীসহ দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা এবং শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট ব্যবসায়ীদের অনেকে ওই এলাকায় চোখ ধাঁধানো ডিজাইনের বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাদের মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়ির পাশেই সাত নম্বর প্লটে বাড়ি করেছেন পলাতক সাবেক হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। চার নম্বর রোডের তিন নম্বর বাড়ির মালিক মোহাম্মদ হোসেন সেরনিয়াবাত।
এছাড়া শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস সেক্রেটারি নাঈমুল ইসলাম খান, সাংবাদিক নেতা ও হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিবি হারুনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারী, শেখ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য এবং দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও বিমা খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী কবির হোসেন ওরফে শেখ কবির এবং সুইডেন আওয়ামী লীগের নেতা বিতর্কিত ব্যবসায়ী কাজী শাহ আলম ওরফে ফুল শাহ আলম নিকুঞ্জ এলাকায় বাড়ি করেছেন।
এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক পাশ্চাত্য নির্মাণশৈলীতে তৈরি সারি সারি ডুপ্লেক্স বাড়ি। সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে যারা প্রভাবশালী তাদের বেশিরভাগই এখন পলাতক বলে জানা গেছে।

দুদকের জালে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো সাবেক রাষ্ট্রপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী সরকারের আমলে টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতি থাকা আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে নিজ ভবন সংলগ্ন এলাকায় সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগ উঠেছে। শুধু অভিযোগ নয়, যাচাই-বাছাই শেষে তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তও নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুর্নীতির অভিযোগে বাংলাদেশের ইতিহাসে সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসাবে প্রথম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দুদকের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তাকে সাজাও ভোগ করতে হয়েছিল। আবদুল হামিদ হচ্ছেন দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি, যিনি দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মুখোমুখি হচ্ছেন।
গতকাল রবিবার বিকেলে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক নিয়মিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান, সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, রাজধানীর অভিজাত নিকুঞ্জ এলাকার লেক ড্রাইভ রোডের ৬ নম্বর প্লটে ৩ তলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে আব্দুল হামিদের। রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব শেষে তিনি ২০২৩ সালের এপ্রিলে সপরিবারে ওই বাড়িতে ওঠেন।
অভিযোগ উঠেছে, বাড়ির দুপাশের রাস্তায় হাঁটার জন্য বাঁধা, নান্দনিক ডেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ, খালসংলগ্ন অত্যাধুনিক ল্যাম্পপোস্ট নির্মাণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। গত ১৮ নভেম্বর এ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান তিনি।
মহাপরিচালক আক্তার হোসেন আরো বলেন, দুদক কখনো ব্যক্তির পরিচয় দেখে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত করে না। এখানে দেখার বিষয় হলো- অভিযোগের বস্তুনিষ্ঠতা এবং তা দুদকের তফসিলভুক্ত কিনা। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যে কোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কমিশন।
জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকা নিকুঞ্জের লেকড্রাইভ রোডের ৬ নম্বর প্লটে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের তিন তলাবিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। যেখানে তিনি রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে উঠেছিলেন। যদিও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সেই বাসা ছেড়ে দেন তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রপতির তিন তলা ডুপ্লেক্স বাড়ি
অভিযোগ রয়েছে, আবদুল হামিদ তার ওই আবাসিক ভবনের দুই পাশের রাস্তা হাঁটার (ওয়াকওয়ে) জন্য বাঁধিয়েছেন। নান্দনিক ডিজাইনে তৈরি ডেক ও ঝুলন্ত ব্রিজ থেকে শুরু করে খালসংলগ্ন রাস্তায় অত্যাধুনিক ল্যাম্প পোস্ট সবই তৈরি করা হয়েছিল তার সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে। প্রকল্পের অংশ না হলেও, পূর্বাচল নতুন শহর ঘিরে একশ ফুট চওড়া খাল খনন প্রকল্পের আওতায় খালটি সংস্কার করা হয়। রাজউকের তত্ত্বাবধানে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। যেখানে রাষ্ট্রের ২৪ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়।
জানা যায়, রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে ১০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে ২০২৩ সালের এপ্রিলে আবদুল হামিদ সপরিবারে নিকুঞ্জের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এরপর এলাকাটি রীতিমতো নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া সাধারণের প্রবেশে ব্যাপকভাবে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। তবে পট পরিবর্তনের পর আলোচিত বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত হয়ে রয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এমপি কোটায় নিকুঞ্জ-১ (দক্ষিণ) আবাসিক এলাকায় প্লট বরাদ্দের আবেদন করেন আবদুল হামিদ। সে অনুযায়ী ১৯৯৭ সালের ৫ অক্টোবর তাকে তিন কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালে সেখানে বাড়ি নির্মাণের জন্য তিনি নকশা অনুমোদন নেন। মোট সাড়ে চার লাখ টাকায় প্লট রেজিস্ট্রি করেন আবদুল হামিদ।
রাজউক ও দুদক সূত্রে জানা যায়, নিকুঞ্জ-১ এলাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ছাড়াও আওয়ামীলীগ সরকারের একাধিক এমপি-মন্ত্রীসহ দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা এবং শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট ব্যবসায়ীদের অনেকে ওই এলাকায় চোখ ধাঁধানো ডিজাইনের বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাদের মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়ির পাশেই সাত নম্বর প্লটে বাড়ি করেছেন পলাতক সাবেক হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। চার নম্বর রোডের তিন নম্বর বাড়ির মালিক মোহাম্মদ হোসেন সেরনিয়াবাত।
এছাড়া শেখ হাসিনার সাবেক প্রেস সেক্রেটারি নাঈমুল ইসলাম খান, সাংবাদিক নেতা ও হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিবি হারুনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারী, শেখ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য এবং দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও বিমা খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী কবির হোসেন ওরফে শেখ কবির এবং সুইডেন আওয়ামী লীগের নেতা বিতর্কিত ব্যবসায়ী কাজী শাহ আলম ওরফে ফুল শাহ আলম নিকুঞ্জ এলাকায় বাড়ি করেছেন।
এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক পাশ্চাত্য নির্মাণশৈলীতে তৈরি সারি সারি ডুপ্লেক্স বাড়ি। সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে যারা প্রভাবশালী তাদের বেশিরভাগই এখন পলাতক বলে জানা গেছে।