মালদ্বীপ ভ্রমণ এখন সাশ্রয়ী

মালদ্বীপ ভ্রমণ এখন সাশ্রয়ী
সিটিজেন ডেস্ক

একসময় পৃথিবীর অতি-ধনী পর্যটকদের একান্ত গন্তব্য হিসেবে পরিচিত মালদ্বীপ। তবে এখন দেশটি স্থানীয় ও টেকসই পর্যটনের নতুন উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এই নিঃশব্দ বিপ্লব ধীরে ধীরে দ্বীপরাজ্যের পর্যটন চিত্রকে পুরোপুরি বদলে দিচ্ছে। বিলাসবহুল ওভারওয়াটার ভিলা এবং সি-প্লেনের কোলাহলের বদলে এখন ভ্রমণকারীরা দ্বীপের স্থানীয় সংস্কৃতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে পারছেন।
বিবিসি ট্রাভেল শো-এর জন্য ১২ বছর আগে এই দ্বীপরাষ্ট্র ভ্রমণের সময় যে মালদ্বীপ দেখানো হয়েছিল, তখন সেটি ছিল এক প্রায় অসম্ভব ব্যয়বহুল গন্তব্য। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিলাসবহুল লাগেজের বদলে সাধারণ পরিবাররা পাবলিক বোটে ভ্রমণ করছে, হাতে ব্যাকপ্যাক। এটি মালদ্বীপের নতুন দিককে প্রতিফলিত করছে এবং ভ্রমণ আরও সাশ্রয়ী করে তুলেছে।
গত এক দশকে মালদ্বীপের ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোতে এক ‘নীরব বিপ্লব’ ঘটেছে। সরকারের সংস্কারের মাধ্যমে স্থানীয়দের জনবসতিপূর্ণ দ্বীপে গেস্টহাউস খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে পর্যটন সীমিত ছিল কেবল জনবসতিহীন রিসোর্ট এলাকায়।
মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সংস্কারের ফলে এখন ৯০টিরও বেশি স্থানীয় দ্বীপে ১,২০০-এর বেশি গেস্টহাউস চালু হয়েছে। এর ফলে ভ্রমণকারীরা প্রথমবারের মতো দেশের প্রাত্যহিক জীবন এবং সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারছেন। পাশাপাশি স্থানীয় পরিবারগুলো সরাসরি পর্যটন থেকে অর্থ উপার্জন করছে। পর্যটন এখন অনেক পরিবারে প্রধান আয়ের উৎস।

থোদ্দু দ্বীপ, মালদ্বীপের ‘কৃষি দ্বীপ’ নামে পরিচিত। এখানে পা রাখলেই তরমুজ এবং লবণের মৃদু গন্ধ মিলবে। সমুদ্রবিমানের শব্দের বদলে শুনা যায় মোটরসাইকেলের ক্ষীণ আওয়াজ। রাজধানী মালের বিলাসবহুল রিসোর্ট জীবনের তুলনায় থোদ্দুর পরিবেশ শান্ত ও নিরিবিলি।
মালে থেকে পাবলিক স্পিডবোটে মালদ্বীপের দ্বীপগুলোতে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ৯০ মিনিট, যা বিলাসবহুল রিসোর্টের সি-প্লেনে ভ্রমণের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। দ্বীপে কোনো গাড়ি নেই; চলাচল হয় মূলত সাইকেল এবং মাঝে মাঝে দেখা যায় ইলেকট্রিক বাগি (অটোরিকশার মতো)। নারিকেল গাছের সারির মাঝে বিস্তৃত পেঁপে ও তরমুজের খেত দ্বীপটিকে সবুজে ভরা এক নৈসর্গিক পরিবেশে রূপ দিয়েছে। ফিরোজা রঙের পানিবেষ্টিত এই দ্বীপের সৌন্দর্য সত্যিই চোখ জুড়িয়ে যায়।
দ্বীপের গেস্টহাউসগুলো যদিও সাদামাটা, তবে অতিথির প্রতি আতিথেয়তা আন্তরিক। খাবার প্রায় ঘরের রান্নার মতো। কয়েক ঘণ্টা আগে ধরা তাজা মাছের ভাজা, স্থানীয় কুমড়ার ঝোল এবং সতেজ তরমুজের রস ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করে।
কমিউনিটি-পরিচালিত পর্যটনের এই নতুন ঢেউ দ্বীপের পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। এখন স্থানীয়রা সরাসরি পর্যটন ডলার থেকে লাভবান হচ্ছেন। প্রবাল প্রাচীর এবং বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় সচেতন হয়ে উঠছেন স্থানীয়রা।
দক্ষিণ মালে দ্বীপে অবস্থিত স্থানীয় মালিকানাধীন ‘সন সিয়াম ওলহুভেলি’ রিসোর্টে। এটি এমন একটি মধ্যম পরিসরের রিসোর্ট, যা ‘টেকসই বিলাসিতা’র নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। রিসোর্টটি জমকালো, কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ।

‘সান সিয়াম কেয়ার্স’ কর্মসূচির অধীনে অতিথিরা সৈকত পরিষ্কার করা, প্রবাল রোপণ এবং লেগুন (ছোট জলাধার) পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। রিসোর্টের ‘পুনর্ব্যবহার’ উদ্যোগের মাধ্যমে পুরোনো লিনেন থেকে পরিষ্কার পরিধানযোগ্য কাপড়ে তৈরি করা হচ্ছে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক এখনো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ব্যক্তিগত রিসোর্টের গণ্ডি পেরিয়ে মালদ্বীপ সরকার এখন পরিবেশ নীতি ও পর্যটনের মধ্যে সমন্বয় ঘটাচ্ছে। পর্যটন ও পরিবেশ মন্ত্রী থরিক ইব্রাহিম এই কৌশলটি সংক্ষিপ্ত করে বলেছেন: ‘আমাদের আদি পরিবেশই আমাদের মৌলিক সম্পদ। আমরা পরিবেশের বিনিময়ে প্রবৃদ্ধির পথে হাঁটছি না।’
প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুইজ্জুর অধীনে, মালদ্বীপ ২০২৮ সালের মধ্যে তার ৩৩ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
মালদ্বীপ ভ্রমণের টিপস
সংস্কৃতি এবং আরামের সমন্বয়:
স্থানীয় গেস্টহাউস এবং রিসোর্টে আপনার থাকার সময় ভাগ করে নিন, যাতে উভয় অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।
থোদ্দুর মতো দ্বীপে পাবলিক স্পিডবোটে যাত্রা জনপ্রতি একমুখী খরচ প্রায় ৩০–৭০ মার্কিন ডলার।
পিক সিজনে ভ্রমণ করলে আগেভাগে বুকিং নিশ্চিত করুন।
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও আচরণ:
প্রবাল-বান্ধব সানস্ক্রিন, স্নরকেল গিয়ার এবং রিফ শু সঙ্গে রাখুন।
সাঁতার বা রোদ গ্রহণ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ‘বিকিনি বিচ’-এ করুন।
গ্রামে বিনয়ী পোশাক পরুন এবং স্থানীয় নিয়ম মেনে চলুন; অধিকাংশ দ্বীপে মদ নিষিদ্ধ।
প্রবাল সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের জন্য বিশ্বস্ত ডাইভ এবং ট্যুর কোম্পানির মাধ্যমে বুকিং করুন।
হোটেল খরচ:
স্থানীয় গেস্টহাউস প্রতি রাতে ৫০–৬০ মার্কিন ডলার থেকে শুরু।
মধ্যম পরিসরের রিসোর্ট যেমন সান সিয়াম ওলহুভেলি ৪৯৯ ডলারের বেশি হতে পারে।
অতি বিলাসবহুল রিসোর্টের দাম ১,০০০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি।

একসময় পৃথিবীর অতি-ধনী পর্যটকদের একান্ত গন্তব্য হিসেবে পরিচিত মালদ্বীপ। তবে এখন দেশটি স্থানীয় ও টেকসই পর্যটনের নতুন উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এই নিঃশব্দ বিপ্লব ধীরে ধীরে দ্বীপরাজ্যের পর্যটন চিত্রকে পুরোপুরি বদলে দিচ্ছে। বিলাসবহুল ওভারওয়াটার ভিলা এবং সি-প্লেনের কোলাহলের বদলে এখন ভ্রমণকারীরা দ্বীপের স্থানীয় সংস্কৃতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে পারছেন।
বিবিসি ট্রাভেল শো-এর জন্য ১২ বছর আগে এই দ্বীপরাষ্ট্র ভ্রমণের সময় যে মালদ্বীপ দেখানো হয়েছিল, তখন সেটি ছিল এক প্রায় অসম্ভব ব্যয়বহুল গন্তব্য। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিলাসবহুল লাগেজের বদলে সাধারণ পরিবাররা পাবলিক বোটে ভ্রমণ করছে, হাতে ব্যাকপ্যাক। এটি মালদ্বীপের নতুন দিককে প্রতিফলিত করছে এবং ভ্রমণ আরও সাশ্রয়ী করে তুলেছে।
গত এক দশকে মালদ্বীপের ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোতে এক ‘নীরব বিপ্লব’ ঘটেছে। সরকারের সংস্কারের মাধ্যমে স্থানীয়দের জনবসতিপূর্ণ দ্বীপে গেস্টহাউস খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে পর্যটন সীমিত ছিল কেবল জনবসতিহীন রিসোর্ট এলাকায়।
মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সংস্কারের ফলে এখন ৯০টিরও বেশি স্থানীয় দ্বীপে ১,২০০-এর বেশি গেস্টহাউস চালু হয়েছে। এর ফলে ভ্রমণকারীরা প্রথমবারের মতো দেশের প্রাত্যহিক জীবন এবং সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারছেন। পাশাপাশি স্থানীয় পরিবারগুলো সরাসরি পর্যটন থেকে অর্থ উপার্জন করছে। পর্যটন এখন অনেক পরিবারে প্রধান আয়ের উৎস।

থোদ্দু দ্বীপ, মালদ্বীপের ‘কৃষি দ্বীপ’ নামে পরিচিত। এখানে পা রাখলেই তরমুজ এবং লবণের মৃদু গন্ধ মিলবে। সমুদ্রবিমানের শব্দের বদলে শুনা যায় মোটরসাইকেলের ক্ষীণ আওয়াজ। রাজধানী মালের বিলাসবহুল রিসোর্ট জীবনের তুলনায় থোদ্দুর পরিবেশ শান্ত ও নিরিবিলি।
মালে থেকে পাবলিক স্পিডবোটে মালদ্বীপের দ্বীপগুলোতে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ৯০ মিনিট, যা বিলাসবহুল রিসোর্টের সি-প্লেনে ভ্রমণের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। দ্বীপে কোনো গাড়ি নেই; চলাচল হয় মূলত সাইকেল এবং মাঝে মাঝে দেখা যায় ইলেকট্রিক বাগি (অটোরিকশার মতো)। নারিকেল গাছের সারির মাঝে বিস্তৃত পেঁপে ও তরমুজের খেত দ্বীপটিকে সবুজে ভরা এক নৈসর্গিক পরিবেশে রূপ দিয়েছে। ফিরোজা রঙের পানিবেষ্টিত এই দ্বীপের সৌন্দর্য সত্যিই চোখ জুড়িয়ে যায়।
দ্বীপের গেস্টহাউসগুলো যদিও সাদামাটা, তবে অতিথির প্রতি আতিথেয়তা আন্তরিক। খাবার প্রায় ঘরের রান্নার মতো। কয়েক ঘণ্টা আগে ধরা তাজা মাছের ভাজা, স্থানীয় কুমড়ার ঝোল এবং সতেজ তরমুজের রস ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করে।
কমিউনিটি-পরিচালিত পর্যটনের এই নতুন ঢেউ দ্বীপের পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। এখন স্থানীয়রা সরাসরি পর্যটন ডলার থেকে লাভবান হচ্ছেন। প্রবাল প্রাচীর এবং বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় সচেতন হয়ে উঠছেন স্থানীয়রা।
দক্ষিণ মালে দ্বীপে অবস্থিত স্থানীয় মালিকানাধীন ‘সন সিয়াম ওলহুভেলি’ রিসোর্টে। এটি এমন একটি মধ্যম পরিসরের রিসোর্ট, যা ‘টেকসই বিলাসিতা’র নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। রিসোর্টটি জমকালো, কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ।

‘সান সিয়াম কেয়ার্স’ কর্মসূচির অধীনে অতিথিরা সৈকত পরিষ্কার করা, প্রবাল রোপণ এবং লেগুন (ছোট জলাধার) পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। রিসোর্টের ‘পুনর্ব্যবহার’ উদ্যোগের মাধ্যমে পুরোনো লিনেন থেকে পরিষ্কার পরিধানযোগ্য কাপড়ে তৈরি করা হচ্ছে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক এখনো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ব্যক্তিগত রিসোর্টের গণ্ডি পেরিয়ে মালদ্বীপ সরকার এখন পরিবেশ নীতি ও পর্যটনের মধ্যে সমন্বয় ঘটাচ্ছে। পর্যটন ও পরিবেশ মন্ত্রী থরিক ইব্রাহিম এই কৌশলটি সংক্ষিপ্ত করে বলেছেন: ‘আমাদের আদি পরিবেশই আমাদের মৌলিক সম্পদ। আমরা পরিবেশের বিনিময়ে প্রবৃদ্ধির পথে হাঁটছি না।’
প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুইজ্জুর অধীনে, মালদ্বীপ ২০২৮ সালের মধ্যে তার ৩৩ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
মালদ্বীপ ভ্রমণের টিপস
সংস্কৃতি এবং আরামের সমন্বয়:
স্থানীয় গেস্টহাউস এবং রিসোর্টে আপনার থাকার সময় ভাগ করে নিন, যাতে উভয় অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।
থোদ্দুর মতো দ্বীপে পাবলিক স্পিডবোটে যাত্রা জনপ্রতি একমুখী খরচ প্রায় ৩০–৭০ মার্কিন ডলার।
পিক সিজনে ভ্রমণ করলে আগেভাগে বুকিং নিশ্চিত করুন।
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও আচরণ:
প্রবাল-বান্ধব সানস্ক্রিন, স্নরকেল গিয়ার এবং রিফ শু সঙ্গে রাখুন।
সাঁতার বা রোদ গ্রহণ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ‘বিকিনি বিচ’-এ করুন।
গ্রামে বিনয়ী পোশাক পরুন এবং স্থানীয় নিয়ম মেনে চলুন; অধিকাংশ দ্বীপে মদ নিষিদ্ধ।
প্রবাল সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের জন্য বিশ্বস্ত ডাইভ এবং ট্যুর কোম্পানির মাধ্যমে বুকিং করুন।
হোটেল খরচ:
স্থানীয় গেস্টহাউস প্রতি রাতে ৫০–৬০ মার্কিন ডলার থেকে শুরু।
মধ্যম পরিসরের রিসোর্ট যেমন সান সিয়াম ওলহুভেলি ৪৯৯ ডলারের বেশি হতে পারে।
অতি বিলাসবহুল রিসোর্টের দাম ১,০০০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি।

মালদ্বীপ ভ্রমণ এখন সাশ্রয়ী
সিটিজেন ডেস্ক

একসময় পৃথিবীর অতি-ধনী পর্যটকদের একান্ত গন্তব্য হিসেবে পরিচিত মালদ্বীপ। তবে এখন দেশটি স্থানীয় ও টেকসই পর্যটনের নতুন উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এই নিঃশব্দ বিপ্লব ধীরে ধীরে দ্বীপরাজ্যের পর্যটন চিত্রকে পুরোপুরি বদলে দিচ্ছে। বিলাসবহুল ওভারওয়াটার ভিলা এবং সি-প্লেনের কোলাহলের বদলে এখন ভ্রমণকারীরা দ্বীপের স্থানীয় সংস্কৃতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে পারছেন।
বিবিসি ট্রাভেল শো-এর জন্য ১২ বছর আগে এই দ্বীপরাষ্ট্র ভ্রমণের সময় যে মালদ্বীপ দেখানো হয়েছিল, তখন সেটি ছিল এক প্রায় অসম্ভব ব্যয়বহুল গন্তব্য। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিলাসবহুল লাগেজের বদলে সাধারণ পরিবাররা পাবলিক বোটে ভ্রমণ করছে, হাতে ব্যাকপ্যাক। এটি মালদ্বীপের নতুন দিককে প্রতিফলিত করছে এবং ভ্রমণ আরও সাশ্রয়ী করে তুলেছে।
গত এক দশকে মালদ্বীপের ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোতে এক ‘নীরব বিপ্লব’ ঘটেছে। সরকারের সংস্কারের মাধ্যমে স্থানীয়দের জনবসতিপূর্ণ দ্বীপে গেস্টহাউস খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে পর্যটন সীমিত ছিল কেবল জনবসতিহীন রিসোর্ট এলাকায়।
মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সংস্কারের ফলে এখন ৯০টিরও বেশি স্থানীয় দ্বীপে ১,২০০-এর বেশি গেস্টহাউস চালু হয়েছে। এর ফলে ভ্রমণকারীরা প্রথমবারের মতো দেশের প্রাত্যহিক জীবন এবং সংস্কৃতি উপভোগ করতে পারছেন। পাশাপাশি স্থানীয় পরিবারগুলো সরাসরি পর্যটন থেকে অর্থ উপার্জন করছে। পর্যটন এখন অনেক পরিবারে প্রধান আয়ের উৎস।

থোদ্দু দ্বীপ, মালদ্বীপের ‘কৃষি দ্বীপ’ নামে পরিচিত। এখানে পা রাখলেই তরমুজ এবং লবণের মৃদু গন্ধ মিলবে। সমুদ্রবিমানের শব্দের বদলে শুনা যায় মোটরসাইকেলের ক্ষীণ আওয়াজ। রাজধানী মালের বিলাসবহুল রিসোর্ট জীবনের তুলনায় থোদ্দুর পরিবেশ শান্ত ও নিরিবিলি।
মালে থেকে পাবলিক স্পিডবোটে মালদ্বীপের দ্বীপগুলোতে পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ৯০ মিনিট, যা বিলাসবহুল রিসোর্টের সি-প্লেনে ভ্রমণের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। দ্বীপে কোনো গাড়ি নেই; চলাচল হয় মূলত সাইকেল এবং মাঝে মাঝে দেখা যায় ইলেকট্রিক বাগি (অটোরিকশার মতো)। নারিকেল গাছের সারির মাঝে বিস্তৃত পেঁপে ও তরমুজের খেত দ্বীপটিকে সবুজে ভরা এক নৈসর্গিক পরিবেশে রূপ দিয়েছে। ফিরোজা রঙের পানিবেষ্টিত এই দ্বীপের সৌন্দর্য সত্যিই চোখ জুড়িয়ে যায়।
দ্বীপের গেস্টহাউসগুলো যদিও সাদামাটা, তবে অতিথির প্রতি আতিথেয়তা আন্তরিক। খাবার প্রায় ঘরের রান্নার মতো। কয়েক ঘণ্টা আগে ধরা তাজা মাছের ভাজা, স্থানীয় কুমড়ার ঝোল এবং সতেজ তরমুজের রস ভ্রমণকারীদের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করে।
কমিউনিটি-পরিচালিত পর্যটনের এই নতুন ঢেউ দ্বীপের পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। এখন স্থানীয়রা সরাসরি পর্যটন ডলার থেকে লাভবান হচ্ছেন। প্রবাল প্রাচীর এবং বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় সচেতন হয়ে উঠছেন স্থানীয়রা।
দক্ষিণ মালে দ্বীপে অবস্থিত স্থানীয় মালিকানাধীন ‘সন সিয়াম ওলহুভেলি’ রিসোর্টে। এটি এমন একটি মধ্যম পরিসরের রিসোর্ট, যা ‘টেকসই বিলাসিতা’র নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। রিসোর্টটি জমকালো, কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ।

‘সান সিয়াম কেয়ার্স’ কর্মসূচির অধীনে অতিথিরা সৈকত পরিষ্কার করা, প্রবাল রোপণ এবং লেগুন (ছোট জলাধার) পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। রিসোর্টের ‘পুনর্ব্যবহার’ উদ্যোগের মাধ্যমে পুরোনো লিনেন থেকে পরিষ্কার পরিধানযোগ্য কাপড়ে তৈরি করা হচ্ছে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক এখনো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ব্যক্তিগত রিসোর্টের গণ্ডি পেরিয়ে মালদ্বীপ সরকার এখন পরিবেশ নীতি ও পর্যটনের মধ্যে সমন্বয় ঘটাচ্ছে। পর্যটন ও পরিবেশ মন্ত্রী থরিক ইব্রাহিম এই কৌশলটি সংক্ষিপ্ত করে বলেছেন: ‘আমাদের আদি পরিবেশই আমাদের মৌলিক সম্পদ। আমরা পরিবেশের বিনিময়ে প্রবৃদ্ধির পথে হাঁটছি না।’
প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুইজ্জুর অধীনে, মালদ্বীপ ২০২৮ সালের মধ্যে তার ৩৩ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
মালদ্বীপ ভ্রমণের টিপস
সংস্কৃতি এবং আরামের সমন্বয়:
স্থানীয় গেস্টহাউস এবং রিসোর্টে আপনার থাকার সময় ভাগ করে নিন, যাতে উভয় অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।
থোদ্দুর মতো দ্বীপে পাবলিক স্পিডবোটে যাত্রা জনপ্রতি একমুখী খরচ প্রায় ৩০–৭০ মার্কিন ডলার।
পিক সিজনে ভ্রমণ করলে আগেভাগে বুকিং নিশ্চিত করুন।
প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও আচরণ:
প্রবাল-বান্ধব সানস্ক্রিন, স্নরকেল গিয়ার এবং রিফ শু সঙ্গে রাখুন।
সাঁতার বা রোদ গ্রহণ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ‘বিকিনি বিচ’-এ করুন।
গ্রামে বিনয়ী পোশাক পরুন এবং স্থানীয় নিয়ম মেনে চলুন; অধিকাংশ দ্বীপে মদ নিষিদ্ধ।
প্রবাল সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের জন্য বিশ্বস্ত ডাইভ এবং ট্যুর কোম্পানির মাধ্যমে বুকিং করুন।
হোটেল খরচ:
স্থানীয় গেস্টহাউস প্রতি রাতে ৫০–৬০ মার্কিন ডলার থেকে শুরু।
মধ্যম পরিসরের রিসোর্ট যেমন সান সিয়াম ওলহুভেলি ৪৯৯ ডলারের বেশি হতে পারে।
অতি বিলাসবহুল রিসোর্টের দাম ১,০০০ মার্কিন ডলার বা তার বেশি।