ব্রেকিং
আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই প্রতিবেশি দেশ, নিহত ৭
আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই প্রতিবেশি দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। ছবি: সংগৃহীত

চার মাস শান্ত থাকার পর গত রবিবার থেকে আবারও সংঘাতে জড়িয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। দেশ দুটির সীমান্ত এলাকায় সংঘাতের মাত্র দু’দিনে অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে কম্বোডিয়ার ৬ জন এবং থাইল্যান্ডের একজন। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ সোমবার রাতে সীমান্ত এলাকায় থাই বাহিনীর ছোড়া গোলায় ২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এতে সংঘাতের শুরু থেকে কম্বোডিয়ায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ জনে, আর থাইল্যান্ডে নিহত হয়েছেন দেশটির এক সেনাসদস্য।

এদিকে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেছেন, “থাইল্যান্ড সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের নাটক সাজিয়ে কম্বোডিয়ার সাধারণ বেসামরিক গ্রামবাসীদের ওপর হামলা চলাচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”

মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর) সকালে এক বিবৃতিতে থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর জানিয়েছে, দেমটির উপকূলবর্তী ত্রাত প্রদেশের জলসীমায় কম্বোডিয়ার সেনা উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের ধাওয়া দিয়েছে থাই নৌ সেনারা। এতে কম্বোডীয় বাহিনীর সদস্যরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের স্থল ও জল সীমান্তে ভারী অস্ত্র এবং স্নাইপার শ্যুটার মোতায়েন করছে কম্বোডিয়া বাহিনী, সুরক্ষিত অবস্থান উন্নত করছে এবং স্থল সীমান্ত এলাকায় পরিখা খনন করছে।

বিবৃতিতে থাই নৌবাহিনী জানিয়েছে, কম্বোডীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর এসব তৎপরতাকে আমরা থাইল্যান্ডের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি এবং গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছি।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ১১৮ বছর ধরে চলতে থাকা দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু হলো এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল বা পান্না ত্রিভুজ। এই এলাকায় থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সীমান্ত মিলিত হয়েছে। প্রাচীন মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপনার সমৃদ্ধি থাকার কারণে পান্না ত্রিভুজকে উভয় দেশই নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে।

এই সমস্যার সূত্রপাত হয়েছিল গত শতকের প্রথম দশকে। তখন কম্বোডিয়া ছিল ফ্রান্সের ঔপনিবেশ। ১৯০৭ সালে ফ্রান্সের প্রকাশিত একটি মানচিত্রে পান্না ত্রিভুজকে কম্বোডিয়ার অংশ হিসেবে দেখানো হয়। সেই সময়েই এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল থাইল্যান্ড।

১৯৫৩ সালের ৯ নভেম্বর ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে কম্বোডিয়া। স্বাধীনতার পরও দেশটি পান্না ত্রিভুজকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে, যার ফলে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সীমান্তে সংঘাতের পর ১৫ বছর আগে দুই দেশ যুদ্ধবিরতি করেছিল। তবে গত বছরের মে মাস থেকে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে আবার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সেই উত্তেজনার জেরে চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষদিকে দুই দেশের সেনাবাহিনী ৫ দিনের তীব্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ওই সংঘাতে দু’দেশের ৪৮ জন নাগরিক নিহত হন এবং প্রায় ৩ লাখ মানুষ নিরাপদ স্থানের জন্য বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। পরে যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ার মধ্যস্থতায় দুই দেশ আবারও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।

চার মাসেরও বেশি সময় শান্ত থাকার পর গত রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার পর সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের সি সা কেত প্রদেশে ফের সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।

থাইল্যান্ডের দৈনিক ব্যাংকক পোস্ট জানিয়েছে, রবিবার জাতিসংঘে কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিল থাইল্যান্ড। অভিযোগে বলা হয়, সীমান্তবর্তী থাই ভূখণ্ডে কম্বোডিয়া গোপনে ব্যাপক ল্যান্ডমাইন স্থাপন করেছে, যার বিস্ফোরণে কয়েকজন থাই ও চীনা নাগরিক আহত হয়েছেন। থাই সরকার এই ঘটনা তদন্তের জন্য জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

জাতিসংঘে থাইল্যান্ড এ অভিযোগ জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৫মিনিটে সি সা কেত প্রদেশের সীমান্ত লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে কম্বোডীয় সেনাবাহিনী। এতে দু’জন থাই সেনা আহত হন।

অতর্কিত এই হামলার জবাবে কম্বোডিয়ায় বিমান অভিযান পরিচালনা করে থাই প্রতিরক্ষা বাহিনী। তারপর থেকেই পুরোদমে শুরু হয় সংঘাত।

সূত্র : রয়টার্স