ব্রেকিং
সুতা শিল্প রক্ষায় ৭ প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবি
স্পিনিং শিল্পে কর্মরত শ্রমিক, কর্মাচারী ও কর্মকর্তারা। ছবি: সংগৃহীত

সুতা শিল্প বা স্পিনিং সেক্টর রক্ষায় প্রণোদনা , আমদানি সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ৭ প্রস্তাবনা জানিয়ে তা বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে স্পিনিং শিল্পে কর্মরত শ্রমিক, কর্মাচারী ও কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সালমা গ্রুপের সিইও আজহার আলী, যমুনা গ্রুপের পরিচালক এ বি এম সিরাজুল ইসলাম, গ্রিনটেক্স স্পিনিংয়ের নির্বাহী পরিচালক রুহুল আমিন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে স্পিনিং সেক্টরের উপর দিয়ে নানান ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট, জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা এসব চ্যালেঞ্জের কারণে বর্তমানে স্পিনিং শিল্প খুবই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি।

তারা বলেন, এরইমধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ শিল্প কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলশ্রুতিতে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। বাকি শিল্প কারখানাসমূহ ক্রমান্বয়ে বন্ধ হওয়ার পথে। এই শিল্পকে বাঁচাতে ও এর সঙ্গে জড়িত লাখো কর্মজীবী মানুষের চাকরি রক্ষার্থে আমাদের প্রস্তাবনাসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে ৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

১. গার্মেন্টস সেক্টরে ৫ শতাংশ প্রণোদনা বিদ্যমান ছিল। কিন্তু বিগত সরকারের শেষ সময়ে হঠাৎ করে ৫% থেকে ১.৫%-এ নিয়ে আসে। গার্মেন্টসের এক্সপোর্টের উপর দেশীয় সুতা ব্যবহারকারীদের জন্য ১০% প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি এবং সুতা আমদানির ক্ষেত্রে ১০% সেইফ গার্ড ডিউটি প্রয়োগ করা।

২. বিগত সরকার কর্তৃক পর পর ৩ ধাপে ৩৫০ শতাংশ গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি করে, ফলে টেক্সটাইল সেক্টরের পণ্য উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। তবে উক্ত টেক্সটাইল সেক্টরের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় মূল্য কোনোভাবেই সমন্বয় করা হয়নি। এর ফলে স্পিনিং সেক্টরসহ সব ব্যাকওয়ার্ড শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই রপ্তানিকৃত পণ্যের সথঙ্গ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল থেকে ৩০ শতাংশ রিবেট দিয়ে আপদকালীন সময় (দুই বছরের জন্য) প্রণোদনা দিতে হবে। প্রতিযোগী দেশগুলো এই ধরনের সুযোগ দিয়ে আসছে।

৩. সূতা আমদানির ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি যে, সূতা রপ্তানিকৃত দেশগুলোর সরকারের প্রণোদনার কারণে আমাদের দেশের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে তারা সূতা রপ্তানি করছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এন্টি ড্যাম্পিং ট্যাক্স/সেইফ গার্ড ডিউটি প্রয়োগ করা।

৪. বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি এবং গার্মেন্টস কারখানাগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো ইডিএফ ফান্ড বরাদ্দ ছিল। যা কোনো কারখানার এক বছরের আমদানি অথবা ৩০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে যেটি বেশি তার সমপরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হত। বর্তমান আপদকালীন সময় থেকে উত্তরণের জন্য আগামী দুই বছরের জন্য উপরোক্ত সুবিধা পুনর্বহাল করা।

৫. এক্সপোর্ট পণ্যের ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচের ৭০ শতাংশ কাঁচামাল স্থানীয় উৎস থেকে খরচ করা।

৬. পণ্য বহুমুখীকরণ (রিসাইকেল এবং সাসটেইনেবল প্রডাক্ট) ও এসব পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে রিসাইকেল এবং সাসটেইনেবল পণ্যের উপর অতিরিক্ত ৫% (উপরোক্ত ১০% এর বাইরে) প্রণোদনা দেওয়া এবং উল্লেখিত পণ্য উৎপাদনের জন্য স্পিনিং মিলের মেশিনারিজ যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করার জন্য ৫% ইন্টারেস্ট ১০ বছর মেয়াদি বিশেষ প্যাকেজের ঋণ সহায়তা প্রদান।

৭. বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার জন্য প্রায় ৪০ ভাগ কাঁচামাল আমদানির সক্ষমতা কমে গেছে। ফলে বর্তমানে কারখানাগুলোয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্যাপাসিটিতে চলছে। তাই পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদন সক্ষমতা ফিরিয়ে নিতে আমদানীর ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা।