ব্রেকিং
জিরো টলারেন্স: বিমানবন্দরে অপকর্মে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা করছে বেবিচক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দরে গত পাঁচ বছরে সংঘটিত চোরাচালান, ঘুষ লেনদেন, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের তালিকা তৈরি করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। শুধু বেবিচকের কর্মীই নয়—অন্য সংস্থার যেসব সদস্য এসব অপকর্মে যুক্ত ছিলেন, তাদেরও তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। তালিকা চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এরই মধ্যে সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে পূর্বের অনিয়ম-অপরাধে জড়িতদের তথ্য পাঠাতে চিঠি দিয়েছে বেবিচক।

বেবিচকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) কাওছার মাহমুদ জানান, বেবিচক এখন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। তিনি বলেন, “আমরা চাই বিমানবন্দরে কর্মরত সবাই স্বচ্ছতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুন, যাতে দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ থাকে।”

বেবিচকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত পাঁচ বছরে সংঘটিত বেশিরভাগ বড় চোরাচালানেই অভ্যন্তরীণ কারও না কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এখন তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৩০ জনের নাম পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তদন্তে উঠে এসেছে—বিমানবন্দরে সক্রিয় রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি বা পদোন্নতির মাধ্যমে দায়িত্ব বদলালেও তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। আগের তদন্তে প্রভাব খাটিয়ে যেসব কর্মকর্তা শাস্তি এড়িয়ে গিয়েছিলেন, তাদেরও এবার সম্পূর্ণ রেকর্ড যাচাই করা হচ্ছে। লাগেজ ছাড়ের নামে অর্থ আদায় থেকে শুরু করে পণ্য চোরাচালান—সবকিছুতেই এসব সিন্ডিকেট জড়িত।

বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, এবার কর্তৃপক্ষ সত্যিই কঠোর অবস্থানে আছে। শনাক্ত হওয়া ৩০ জনের মধ্যে কেউ বদলি হয়ে অন্য বিভাগে গেলেও অনেকেই এখনও দায়িত্বে আছেন। সবার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, প্রমাণ মিললে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, আগের অভিযোগগুলোতে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকায় শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি, কিন্তু এবার ভিডিও ফুটেজ, সাক্ষ্য ও নথিসহ পূর্ণাঙ্গ প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

বেবিচক সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় অসাধু চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করতে গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এদের মধ্যে বেবিচক, এভিয়েশন সিকিউরিটি, কাস্টমস, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আনসারসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্য রয়েছেন। ইতোমধ্যে ৩০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে—যাদের মধ্যে আর্মড পুলিশের ৪ জন, এভিয়েশন সিকিউরিটির ৮ জন, আনসারের ২ জন, সিকিউরিটি গার্ড ৪ জন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৩ জন এবং কাস্টমসের ২ জন আছেন। তদন্তের স্বার্থে কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি।

তদন্তে আরও জানা গেছে, লোডারদের মাধ্যমে বিমান থেকে মালামাল নামানোর সময় অনেক চোরাচালান ঘটে। ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখাতেও গড়ে উঠেছে অপরাধচক্র। চোরাচালানকারীরা সোনা পাচারে নানা কৌশল ব্যবহার করছে। জুতা, বেল্ট, পোশাকের অংশ, সাবানের কৌটা, ইলেকট্রনিকস, এমনকি সোনা গুঁড়া করে কাপড়ে মেশানো বা মোবাইল-ল্যাপটপের ভেতর ঢোকানো হচ্ছে। স্ক্যানার ফাঁকি দিতে সোনার ওপর কালো বা রুপালি প্রলেপও দেওয়া হয়।

বেবিচক জানিয়েছে, এসব অপরাধচক্র দমনে এবার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কার্গো হাউস থেকে মোবাইল চুরি করে বের হওয়ার সময় এক আনসার সদস্যকে আটক করা হয়। পরে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।