ব্রেকিং
আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ও গানম্যান নীতিমালা জারি
আগ্নেয়াস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ সংসদ সংসদ পদপ্রার্থী ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স লাইসেন্স ও গানম্যান (রিটেইনার) নিয়োগ নীতিমালা-২০২৫ জারি করেছে সরকার। আজ সোমবার ১৫ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে ‘জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা এবং নির্বাচনকালীন সহিংসতা প্রতিরোধে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও জাতীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স ও গানম্যান নিয়োগের জন্য সরকার এ নীতিমালা জারি করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর পরদিন শুক্রবার দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্যপ্রার্থী ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করা হয়। গত শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তাদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে। (যদিও বর্তমানে ব্যক্তি পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রয়েছে)।

এই নীতিমালার আওতায় অনুমোদনকৃত লাইসেন্সের মেয়াদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার তারিখ হতে পরবর্তী ১৫ দিন হবে। ওই সময়ের এসব লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। তবে লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য জারিকৃত নীতিমালার অন্যান্য শর্ত পূরণ হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সাময়িক লাইসেন্সকে সাধারণ লাইসেন্সে রূপান্তর করতে পারবে; লাইসেন্সের মেয়াদ অতিক্রান্ত হলে বা লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পরও কোনো লাইসেন্সধারী ওই লাইসেন্সের বিপরীতে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র নিজ দখলে রাখলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সের নীতিমালা অনুযায়ী আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সধারীকে নির্ধারিত পরিমাণে আয়কর দিতে হবে। কোনো প্রার্থী যখন নির্বাচনে জয়লাভ করবে তারা শুধু আয়করমুক্ত লাইসেন্স নিতে পারবে। তবে রির্বাচনে যারা পরাজিত হবেন তাদের জন্য নির্ধারিত আয়কর বাধ্যতামূলক থাকবে।

নীতিমালায় সাতটি অধ্যায় ও ১৯টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। নীতিমালার প্রথম অধ্যায়ে সাধারণ বিধান, দ্বিতীয় অধ্যায়ে নীতিমালার উদ্দেশ্য ও ভিত্তি, তৃতীয় অধ্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স সংক্রান্ত বিধান, চতুর্থ অধ্যায়ে রিটেইনার নিয়োগ, পঞ্চম অধ্যায়ে রিটেইনার নিয়োগের পদ্ধতি, ষষ্ঠ অধ্যায়ে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধির সঙ্গে সামঞ্জস্য এবং সপ্তম অধ্যায়ে আপিল ও ক্ষমতা সংরক্ষণ বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

নীতিমালার সংজ্ঞায় ‘রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ অর্থ সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বর্তমান বা সাবেক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তি; ‘পদপ্রার্থী’ অর্থ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট মনোনয়নপত্র দাখিলকারী কোনো ব্যক্তি, ‘লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ’ অর্থ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ; ‘রিটেইনার’ অর্থ সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত ও অনুমোদিত সশস্ত্র ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে।

লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্যতা হিসেবে সরকার কর্তৃক স্বীকৃত রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হতে হবে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে; উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থা) কর্তৃক যাচাইকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকি বিদ্যমান থাকতে হবে; শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা থাকতে হবে; অস্ত্র সংরক্ষণের নিরাপদ ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং এই নীতিমালার অধীনে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে এই সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত অন্যান্য নীতিমালা ও বিধান প্রযোজ্য হবে। তবে ব্যক্তিগত আয়কর প্রদান সংক্রান্ত অংশ শিথিলযোগ্য হবে।

গানম্যান নিয়োগের শর্ত সম্পর্কে বলা হয়েছে– কেবল প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে রিটেইনার নিয়োগ অনুমোদনযোগ্য হবে। রাজনৈতিক কার্যক্রমে প্রভাব বিস্তার কিংবা ভয়ভীতির উদ্দেশ্যে গানম্যান নিয়োগ করা বা অনুমোদন করা যাবে না। কোন রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থী লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্য হলে এবং তিনি আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়ে অসমর্থ হলে বা অনিচ্ছুক হলে বৈধ লাইসেন্সসহ আগ্নেয়াস্ত্র আছে, তা পরিচালনায় সক্ষম এবং কোন রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা পদপ্রার্থীর রিটেইনার হতে ইচ্ছুক এমন কোন ব্যক্তিকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ রিটেইনার নিয়োগ করতে পারবেন।