ব্রেকিং
আমরা একাত্তর ও চব্বিশকে সমানভাবেই সম্মান করবো: জামায়াত আমীর
সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিজয় দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: সিটিজেন জার্নাল

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ২৪ শুধু আমাদের ইতিহাসের অংশ নয়, এটি আমাদের কলিজার অংশ। এই ২৪–কে সম্মান করলেই বাংলাদেশ ও জাতিকে সম্মান করা হবে। আমরা ৭১–কে যেভাবে সম্মান করব, তেমনিভাবে ২৪–কেও সম্মান করব।

আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কবি নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে বিজয় দিবস উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যার যেখানে অবদান, সেটিকে কোনোভাবেই খাটো করা সমীচীন নয়। সবার অবদানকে স্বীকৃতি দিলে এ দেশে জ্ঞানী ও বীরদের জন্ম হবে। আর অবদান অস্বীকার করা হলে জ্ঞানের আত্মহত্যা হবে এবং মায়ের কোলে আর কোনো বীরের জন্ম হবে না। এজন্য আমরা আমাদের বীরদের আজীবন শ্রদ্ধা করে যাব।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, এখন দলগুলোর দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। দেশকে ভুলে গিয়ে ব্যক্তি-কেন্দ্রিক চিন্তা করলে জাতি ক্ষমা করবে না। দেশের ও জাতির স্বার্থকে সবার ওপরে তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চাই না। অতীত কখনো গতিশীল জাতির পরিচয় বহন করে না। আমরা জাতিকে বিভক্ত দেখতে চাই না, চাই একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি। আমাদের ওপর বাইরে থেকে কেউ এসে খবরদারি করুক, এটিও আমরা চাই না। দাদাগিরি আমরা বরদাস্ত করব না।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রসঙ্গ তুলে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। তার জীবন নিয়ে তারা শঙ্কিত। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। হাদি আবার বিপ্লবী হিসেবে ফিরে আসবেন—এমন দোয়ার কথাও বলেন জামায়াত আমির।

হাদির চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করে তিনি বলেন, তবে এমন ঘটনা ঘটার পর সরকার নড়েচড়ে বসবে—এটি তারা চান না। বরং তরুণ বিপ্লবীরা যাতে এ ধরনের হামলার শিকার না হন, সে দায়িত্ব সরকারকে আগেই পালন করতে হবে।’

নির্বাচন কমিশনের প্রধানের একটি বক্তব্যের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ওই বক্তব্য জাতিকে আহত করেছে এবং ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে জাতির মনে সৃষ্ট দুঃখ দূর করার দায়িত্ব তার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে অনেকের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। তবে পদত্যাগ নয়, দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা প্রমাণ করার আহ্বান জানান তিনি। ব্যর্থ হলে ‘৫ আগস্ট বারবার ফিরে আসবে’ বলেও সতর্ক করেন, যদিও সেটি তারা কামনা করেন না বলে উল্লেখ করেন। তাদের কামনা একটি মানবিক ও দুর্নীতিমুক্ত, তারুণ্যের বাংলাদেশ।

জামায়াত আমির বলেন, যারা বিজয় এনে দিয়েছে, বাংলাদেশ তাদের হাতেই তুলে দিতে চান তারা। তরুণদের লক্ষ্য করে যেসব হামলা হচ্ছে, সেগুলোর নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ভয় দেখানোর ষড়যন্ত্র করে জাতিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। বরং এসব আঘাত জাতিকে নতুন করে জীবন দেবে।

স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভয়ভীতি ও অপপ্রচারের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসনের চেষ্টা যারা করছেন, তারা চিহ্নিত হয়ে গেছেন। তাদের সংশোধিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে কাউকে বাদ না দিয়ে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতি গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা তাদের সঙ্গে আসবেন, তাদের তিনটি বিষয়ে অঙ্গীকার করতে হবে— নিজেরা দুর্নীতিতে জড়াবেন না, বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করবেন না এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল। সভায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।