দিল্লি–ইসলামাবাদে বিস্ফোরণ: দক্ষিণ এশিয়ায় সুপ্ত নিরাপত্তা হুমকির ভয়াবহ সংকেত

দিল্লি–ইসলামাবাদে বিস্ফোরণ: দক্ষিণ এশিয়ায় সুপ্ত নিরাপত্তা হুমকির ভয়াবহ সংকেত
সিটিজেন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২১

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ও ভারতের রাজধাণী দিল্লীর গাড়ীতে বোমা বিস্ফোরণের ছবি। ছবি: আল-জাজিরা
দিল্লিতে গাড়িবিস্ফোরণের পর যখন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা একটি পুড়ে যাওয়া গাড়ির অংশগুলো পরীক্ষা করছিলেন, ঠিক তার ২৪ ঘণ্টার মাথায় ইসলামাবাদের বিচারিক কমপ্লেক্সের বাইরে ঘটে গেল আরেকটি আত্মঘাতী বোমা হামলা। দুই প্রাণঘাতী হামলার কোনোটির দায় এখনো কেউ স্বীকার করেনি, দুই ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সেটিও অজানা।
তবে ঘটনা দুটির বার্তা স্পষ্ট—দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের নিরাপত্তাজনিত যে সব সুপ্ত হুমকি দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকে, সেগুলো কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ তারই ইঙ্গিত।
রাজধানীর কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে এমন হামলা অত্যন্ত বিরল। কিন্তু পরপর দুই দিনে দফায় দফায় বিস্ফোরণ ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রশাসনকে নতুন করে উদ্বেগে ফেলেছে। উদ্বেগ বাড়িয়েছে এ আশঙ্কা—অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের যে চক্র এত দিন ধরে চলে আসছে, তা আবারও জোরালো হতে পারে এমন এক সময়ে, যখন তিন দেশই আগে থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদের আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন—পাকিস্তানের রাজধানীতে প্রায় দুই দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। এর মাত্র এক দিন আগে দিল্লির একটি ঐতিহাসিক এলাকায় গাড়িবিস্ফোরণে মারা যান অন্তত ১০ জন, আহত হন আরও অনেকে।
এই দুই ঘটনার পর দুই দেশের কট্টরপন্থী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো হাতে পেয়েছে নতুন অস্ত্র—সরকারকে আরও কঠোর অবস্থানে ঠেলে দেওয়ার চাপ।
অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেছেন, ইসলামাবাদের হামলা ‘ভারতীয় সন্ত্রাসী সহযোগীদের’ দ্বারা সংঘটিত এবং সেটি ‘ভারতের সহায়তায় আফগান ভূমি থেকে পরিচালিত’। নয়াদিল্লি সঙ্গে সঙ্গে এসব মন্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বুধবার ভারত জানিয়েছে, দিল্লির বিস্ফোরণ রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির ‘সন্ত্রাসী ঘটনা’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—যারা দায়ী, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যদিও ভারত এখনো হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পৃক্ততার কথা বলেনি।
রাজধানীর নিরাপত্তা প্রশ্নে নতুন চাপ
দিল্লির বিস্ফোরণটি ঘটে লালকেল্লার খুব কাছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই পুলিশ ফরিদাবাদে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করেছিল। ‘শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা নীতি’র প্রতীক হিসেবে পরিচিত মোদির সরকার তাই এখন বিরোধীদের সমালোচনার মুখে।
ইসলামাবাদের বিস্ফোরণটি ঘটে বিচারিক কমপ্লেক্সের পার্কিং এলাকায়—যেখানে বহু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বাসভবন কাছেই।
পাকিস্তানে এ ধরনের হামলা বিরল নয়, তবে রাজধানী ইসলামাবাদ সব সময়ই কড়া নিরাপত্তা বলয়ে থাকে। তবু গত দশকে পাকিস্তানে বহু প্রাণঘাতী হামলার জন্য দায়ী টিটিপির একটি শাখা—জামাআতুল আহরার—এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ হামলাকে ‘সতর্কবার্তা’ বলে উল্লেখ করেছে—বিশেষ করে আফগানিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে। তাদের দাবি, আফগান ভূখণ্ডে থাকা জঙ্গিঘাঁটিতেই এসব হামলার শিকড়।
২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানে সহিংসতা নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্তসংঘর্ষও বেড়েছে। কাতার ও ইস্তাম্বুলে আলোচনা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
আফগান তালেবান অবশ্য টিটিপিকে সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করে ইসলামাবাদের হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
অস্থিরতা বাড়ার শঙ্কা
হামলার পর ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে যে অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগ শুরু হয়েছে, তা দুই দেশের পরিচিত রাজনৈতিক আচরণ। বহু বছর ধরেই পাকিস্তান দাবি করে—ভারত তার ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদ উসকে দিচ্ছে এবং আফগানিস্তানকে ব্যবহার করে পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গিদের সহযোগিতা দিচ্ছে। অন্যদিকে ভারতও অভিযোগ তোলে, পাকিস্তান তার বিরুদ্ধে পরিচালিত হামলাকারীদের আশ্রয় দেয়।
কয়েক মাস আগেই দুই দেশ জড়িয়ে পড়েছিল কয়েক দশকের সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষে। কাশ্মীরের এক পাহাড়ি এলাকায় ২৬ জনকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘাতে দুই পক্ষই বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ব্যবহার করে। ভারত হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ অভিযোগ অস্বীকার করে। এরপর ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়, যার জবাবেও পাকিস্তান সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখায়।
ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছে সাধারণ মানুষ
অভিযোগ ও উত্তপ্ত রাজনৈতিক বক্তব্য যখন দুই রাজধানীতেই বাড়ছে, তখন দিল্লি ও ইসলামাবাদের সাধারণ মানুষ ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলছে নিজ নিজ শহর থেকে। শোক পালন করছে নিকটজন হারানোর বেদনায়।
- রিয়া মোগল সিএনএন ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাংবাদিক
সূত্র: সিএনএন থেকে নেওয়া, ইংরেজিতে থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

দিল্লিতে গাড়িবিস্ফোরণের পর যখন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা একটি পুড়ে যাওয়া গাড়ির অংশগুলো পরীক্ষা করছিলেন, ঠিক তার ২৪ ঘণ্টার মাথায় ইসলামাবাদের বিচারিক কমপ্লেক্সের বাইরে ঘটে গেল আরেকটি আত্মঘাতী বোমা হামলা। দুই প্রাণঘাতী হামলার কোনোটির দায় এখনো কেউ স্বীকার করেনি, দুই ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সেটিও অজানা।
তবে ঘটনা দুটির বার্তা স্পষ্ট—দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের নিরাপত্তাজনিত যে সব সুপ্ত হুমকি দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকে, সেগুলো কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ তারই ইঙ্গিত।
রাজধানীর কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে এমন হামলা অত্যন্ত বিরল। কিন্তু পরপর দুই দিনে দফায় দফায় বিস্ফোরণ ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রশাসনকে নতুন করে উদ্বেগে ফেলেছে। উদ্বেগ বাড়িয়েছে এ আশঙ্কা—অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের যে চক্র এত দিন ধরে চলে আসছে, তা আবারও জোরালো হতে পারে এমন এক সময়ে, যখন তিন দেশই আগে থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদের আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন—পাকিস্তানের রাজধানীতে প্রায় দুই দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। এর মাত্র এক দিন আগে দিল্লির একটি ঐতিহাসিক এলাকায় গাড়িবিস্ফোরণে মারা যান অন্তত ১০ জন, আহত হন আরও অনেকে।
এই দুই ঘটনার পর দুই দেশের কট্টরপন্থী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো হাতে পেয়েছে নতুন অস্ত্র—সরকারকে আরও কঠোর অবস্থানে ঠেলে দেওয়ার চাপ।
অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেছেন, ইসলামাবাদের হামলা ‘ভারতীয় সন্ত্রাসী সহযোগীদের’ দ্বারা সংঘটিত এবং সেটি ‘ভারতের সহায়তায় আফগান ভূমি থেকে পরিচালিত’। নয়াদিল্লি সঙ্গে সঙ্গে এসব মন্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বুধবার ভারত জানিয়েছে, দিল্লির বিস্ফোরণ রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির ‘সন্ত্রাসী ঘটনা’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—যারা দায়ী, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যদিও ভারত এখনো হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পৃক্ততার কথা বলেনি।
রাজধানীর নিরাপত্তা প্রশ্নে নতুন চাপ
দিল্লির বিস্ফোরণটি ঘটে লালকেল্লার খুব কাছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই পুলিশ ফরিদাবাদে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করেছিল। ‘শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা নীতি’র প্রতীক হিসেবে পরিচিত মোদির সরকার তাই এখন বিরোধীদের সমালোচনার মুখে।
ইসলামাবাদের বিস্ফোরণটি ঘটে বিচারিক কমপ্লেক্সের পার্কিং এলাকায়—যেখানে বহু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বাসভবন কাছেই।
পাকিস্তানে এ ধরনের হামলা বিরল নয়, তবে রাজধানী ইসলামাবাদ সব সময়ই কড়া নিরাপত্তা বলয়ে থাকে। তবু গত দশকে পাকিস্তানে বহু প্রাণঘাতী হামলার জন্য দায়ী টিটিপির একটি শাখা—জামাআতুল আহরার—এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ হামলাকে ‘সতর্কবার্তা’ বলে উল্লেখ করেছে—বিশেষ করে আফগানিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে। তাদের দাবি, আফগান ভূখণ্ডে থাকা জঙ্গিঘাঁটিতেই এসব হামলার শিকড়।
২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানে সহিংসতা নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্তসংঘর্ষও বেড়েছে। কাতার ও ইস্তাম্বুলে আলোচনা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
আফগান তালেবান অবশ্য টিটিপিকে সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করে ইসলামাবাদের হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
অস্থিরতা বাড়ার শঙ্কা
হামলার পর ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে যে অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগ শুরু হয়েছে, তা দুই দেশের পরিচিত রাজনৈতিক আচরণ। বহু বছর ধরেই পাকিস্তান দাবি করে—ভারত তার ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদ উসকে দিচ্ছে এবং আফগানিস্তানকে ব্যবহার করে পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গিদের সহযোগিতা দিচ্ছে। অন্যদিকে ভারতও অভিযোগ তোলে, পাকিস্তান তার বিরুদ্ধে পরিচালিত হামলাকারীদের আশ্রয় দেয়।
কয়েক মাস আগেই দুই দেশ জড়িয়ে পড়েছিল কয়েক দশকের সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষে। কাশ্মীরের এক পাহাড়ি এলাকায় ২৬ জনকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘাতে দুই পক্ষই বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ব্যবহার করে। ভারত হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ অভিযোগ অস্বীকার করে। এরপর ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়, যার জবাবেও পাকিস্তান সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখায়।
ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছে সাধারণ মানুষ
অভিযোগ ও উত্তপ্ত রাজনৈতিক বক্তব্য যখন দুই রাজধানীতেই বাড়ছে, তখন দিল্লি ও ইসলামাবাদের সাধারণ মানুষ ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলছে নিজ নিজ শহর থেকে। শোক পালন করছে নিকটজন হারানোর বেদনায়।
- রিয়া মোগল সিএনএন ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাংবাদিক
সূত্র: সিএনএন থেকে নেওয়া, ইংরেজিতে থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

দিল্লি–ইসলামাবাদে বিস্ফোরণ: দক্ষিণ এশিয়ায় সুপ্ত নিরাপত্তা হুমকির ভয়াবহ সংকেত
সিটিজেন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২১

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ও ভারতের রাজধাণী দিল্লীর গাড়ীতে বোমা বিস্ফোরণের ছবি। ছবি: আল-জাজিরা
দিল্লিতে গাড়িবিস্ফোরণের পর যখন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা একটি পুড়ে যাওয়া গাড়ির অংশগুলো পরীক্ষা করছিলেন, ঠিক তার ২৪ ঘণ্টার মাথায় ইসলামাবাদের বিচারিক কমপ্লেক্সের বাইরে ঘটে গেল আরেকটি আত্মঘাতী বোমা হামলা। দুই প্রাণঘাতী হামলার কোনোটির দায় এখনো কেউ স্বীকার করেনি, দুই ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সেটিও অজানা।
তবে ঘটনা দুটির বার্তা স্পষ্ট—দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের নিরাপত্তাজনিত যে সব সুপ্ত হুমকি দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকে, সেগুলো কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ তারই ইঙ্গিত।
রাজধানীর কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে এমন হামলা অত্যন্ত বিরল। কিন্তু পরপর দুই দিনে দফায় দফায় বিস্ফোরণ ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রশাসনকে নতুন করে উদ্বেগে ফেলেছে। উদ্বেগ বাড়িয়েছে এ আশঙ্কা—অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের যে চক্র এত দিন ধরে চলে আসছে, তা আবারও জোরালো হতে পারে এমন এক সময়ে, যখন তিন দেশই আগে থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদের আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন—পাকিস্তানের রাজধানীতে প্রায় দুই দশকের মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। এর মাত্র এক দিন আগে দিল্লির একটি ঐতিহাসিক এলাকায় গাড়িবিস্ফোরণে মারা যান অন্তত ১০ জন, আহত হন আরও অনেকে।
এই দুই ঘটনার পর দুই দেশের কট্টরপন্থী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো হাতে পেয়েছে নতুন অস্ত্র—সরকারকে আরও কঠোর অবস্থানে ঠেলে দেওয়ার চাপ।
অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেছেন, ইসলামাবাদের হামলা ‘ভারতীয় সন্ত্রাসী সহযোগীদের’ দ্বারা সংঘটিত এবং সেটি ‘ভারতের সহায়তায় আফগান ভূমি থেকে পরিচালিত’। নয়াদিল্লি সঙ্গে সঙ্গে এসব মন্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
বুধবার ভারত জানিয়েছে, দিল্লির বিস্ফোরণ রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির ‘সন্ত্রাসী ঘটনা’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—যারা দায়ী, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যদিও ভারত এখনো হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পৃক্ততার কথা বলেনি।
রাজধানীর নিরাপত্তা প্রশ্নে নতুন চাপ
দিল্লির বিস্ফোরণটি ঘটে লালকেল্লার খুব কাছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই পুলিশ ফরিদাবাদে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করেছিল। ‘শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা নীতি’র প্রতীক হিসেবে পরিচিত মোদির সরকার তাই এখন বিরোধীদের সমালোচনার মুখে।
ইসলামাবাদের বিস্ফোরণটি ঘটে বিচারিক কমপ্লেক্সের পার্কিং এলাকায়—যেখানে বহু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বাসভবন কাছেই।
পাকিস্তানে এ ধরনের হামলা বিরল নয়, তবে রাজধানী ইসলামাবাদ সব সময়ই কড়া নিরাপত্তা বলয়ে থাকে। তবু গত দশকে পাকিস্তানে বহু প্রাণঘাতী হামলার জন্য দায়ী টিটিপির একটি শাখা—জামাআতুল আহরার—এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ হামলাকে ‘সতর্কবার্তা’ বলে উল্লেখ করেছে—বিশেষ করে আফগানিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে। তাদের দাবি, আফগান ভূখণ্ডে থাকা জঙ্গিঘাঁটিতেই এসব হামলার শিকড়।
২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানে সহিংসতা নতুন করে বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্তসংঘর্ষও বেড়েছে। কাতার ও ইস্তাম্বুলে আলোচনা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
আফগান তালেবান অবশ্য টিটিপিকে সহায়তার অভিযোগ অস্বীকার করে ইসলামাবাদের হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
অস্থিরতা বাড়ার শঙ্কা
হামলার পর ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে যে অভিযোগ–পাল্টা অভিযোগ শুরু হয়েছে, তা দুই দেশের পরিচিত রাজনৈতিক আচরণ। বহু বছর ধরেই পাকিস্তান দাবি করে—ভারত তার ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদ উসকে দিচ্ছে এবং আফগানিস্তানকে ব্যবহার করে পাকিস্তানবিরোধী জঙ্গিদের সহযোগিতা দিচ্ছে। অন্যদিকে ভারতও অভিযোগ তোলে, পাকিস্তান তার বিরুদ্ধে পরিচালিত হামলাকারীদের আশ্রয় দেয়।
কয়েক মাস আগেই দুই দেশ জড়িয়ে পড়েছিল কয়েক দশকের সবচেয়ে তীব্র সংঘর্ষে। কাশ্মীরের এক পাহাড়ি এলাকায় ২৬ জনকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘাতে দুই পক্ষই বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ব্যবহার করে। ভারত হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ অভিযোগ অস্বীকার করে। এরপর ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়, যার জবাবেও পাকিস্তান সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখায়।
ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছে সাধারণ মানুষ
অভিযোগ ও উত্তপ্ত রাজনৈতিক বক্তব্য যখন দুই রাজধানীতেই বাড়ছে, তখন দিল্লি ও ইসলামাবাদের সাধারণ মানুষ ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলছে নিজ নিজ শহর থেকে। শোক পালন করছে নিকটজন হারানোর বেদনায়।
- রিয়া মোগল সিএনএন ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাংবাদিক
সূত্র: সিএনএন থেকে নেওয়া, ইংরেজিতে থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত