যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব বাতিলের ‘গোপন ক্ষমতা’ ঝুঁকিতে মুসলিম নাগরিকরা: প্রতিবেদন

যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব বাতিলের ‘গোপন ক্ষমতা’ ঝুঁকিতে মুসলিম নাগরিকরা: প্রতিবেদন
সিটিজেন ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে সরকারের হাতে থাকা নাগরিকত্ব বাতিলের ‘চরম ও গোপন’ ক্ষমতা লাখো মুসলিম নাগরিককে গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলছে। এই ক্ষমতার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে একটি নতুন গবেষণা প্রতিবেদন।
যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য মানবাধিকার ও নীতিবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রানিমিড ট্রাস্ট ও রিপ্রিভ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী প্রায় ৯০ লাখ মানুষ— যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ আইনগতভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ক্ষমতা দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে পারিবারিক বা বংশগত সম্পর্ক রয়েছে— এমন নাগরিকদের ওপর অসমভাবে প্রয়োগ হচ্ছে। ফলে এসব পটভূমির মানুষেরা বিশেষ ঝুঁকিতে পড়ছেন।
রানিমিড ট্রাস্ট ও রিপ্রিভ উভয়ই সতর্ক করে বলেছে, বর্তমান নাগরিকত্ব বাতিলের ব্যবস্থা কার্যত মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি পদ্ধতিগত হুমকিতে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতির তুলনা টানা হয়েছে ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের প্রতীক হয়ে ওঠা ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি’র সঙ্গে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে— এমন ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশের শিকড় এসব অঞ্চলে।
বর্তমান আইনে সরকার কোনো ব্রিটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে, যদি তারা মনে করে ওই ব্যক্তি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য। এমনকি তিনি সেই দেশে কখনো বসবাস না করে থাকলেও বা নিজেকে সে দেশের নাগরিক মনে না করলেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।
অধিকারকর্মীদের মতে, এর ফলে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে একটি বর্ণভিত্তিক স্তরবিন্যাস তৈরি হয়েছে। এতে মুসলিম নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার শর্তসাপেক্ষ হয়ে উঠছে, যা শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
রিপ্রিভের কর্মকর্তা মায়া ফোয়া মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সুবিধার জন্য আগের সরকার মানব পাচারের শিকার ব্রিটিশ নাগরিকদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছিল। আর বর্তমান সরকার এই চরম ও গোপন ক্ষমতা আরও সম্প্রসারিত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘পরবর্তী কোনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাইলে ৯০ লাখ মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে পারেন— এই আশঙ্কা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, বিশেষ করে যদি ভবিষ্যতে কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতায় আসে।’
রানিমিড ট্রাস্টের পরিচালক শাবনা বেগম বলেন, নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক ও প্রায় নজরদারিহীন ক্ষমতা ব্রিটেনের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি আরও বলেন, ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী আইনগুলোর মতো এখানেও কার্যকর কোনো নজরদারি ব্যবস্থা নেই। নাগরিকত্ব কোনো সুযোগ নয়, এটি একটি অধিকার। অথচ একের পর এক সরকার নাগরিকত্বকে “ভালো” বা “খারাপ” আচরণের সঙ্গে যুক্ত করে দ্বিস্তরের নীতি চালু করছে।’
প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর পাঁচজনের মধ্যে তিনজন নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। বিপরীতে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি মাত্র ২০ জনে ১ জন। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় অশ্বেতাঙ্গদের নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকি প্রায় ১২ গুণ বেশি।
ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছেন প্রায় ৯ লাখ ৮৪ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত, ৬ লাখ ৭৯ হাজার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এবং বাংলাদেশিসহ মোট ৩৩ লাখ এশীয় ব্রিটিশ। বাস্তবে যাঁদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই দক্ষিণ এশীয়, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বংশোদ্ভূত মুসলিম।
ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা শামিমা বেগমের। যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া এই কিশোরীর নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় এই যুক্তিতে যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারেন। যদিও বাংলাদেশ সরকার সে দাবি অস্বীকার করেছে। কিশোর বয়সে আইএসে যোগ দিতে তিনি যুক্তরাজ্য ছেড়েছিলেন এবং পরে দেশে ফিরতে চাইলে তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়।
প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন কনজারভেটিভ ও রিফর্ম ইউকে দলের রাজনীতিকেরা আরও কঠোর অভিবাসন নীতির কথা বলছেন। দুই দলই এমন পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যার মাধ্যমে আইনিভাবে বসবাসকারী লাখো মানুষকে যুক্তরাজ্য ছাড়তে বাধ্য করা হতে পারে।
এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই

যুক্তরাজ্যে সরকারের হাতে থাকা নাগরিকত্ব বাতিলের ‘চরম ও গোপন’ ক্ষমতা লাখো মুসলিম নাগরিককে গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলছে। এই ক্ষমতার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে একটি নতুন গবেষণা প্রতিবেদন।
যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য মানবাধিকার ও নীতিবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রানিমিড ট্রাস্ট ও রিপ্রিভ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী প্রায় ৯০ লাখ মানুষ— যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ আইনগতভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ক্ষমতা দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে পারিবারিক বা বংশগত সম্পর্ক রয়েছে— এমন নাগরিকদের ওপর অসমভাবে প্রয়োগ হচ্ছে। ফলে এসব পটভূমির মানুষেরা বিশেষ ঝুঁকিতে পড়ছেন।
রানিমিড ট্রাস্ট ও রিপ্রিভ উভয়ই সতর্ক করে বলেছে, বর্তমান নাগরিকত্ব বাতিলের ব্যবস্থা কার্যত মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি পদ্ধতিগত হুমকিতে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতির তুলনা টানা হয়েছে ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের প্রতীক হয়ে ওঠা ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি’র সঙ্গে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে— এমন ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশের শিকড় এসব অঞ্চলে।
বর্তমান আইনে সরকার কোনো ব্রিটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে, যদি তারা মনে করে ওই ব্যক্তি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য। এমনকি তিনি সেই দেশে কখনো বসবাস না করে থাকলেও বা নিজেকে সে দেশের নাগরিক মনে না করলেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।
অধিকারকর্মীদের মতে, এর ফলে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে একটি বর্ণভিত্তিক স্তরবিন্যাস তৈরি হয়েছে। এতে মুসলিম নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার শর্তসাপেক্ষ হয়ে উঠছে, যা শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
রিপ্রিভের কর্মকর্তা মায়া ফোয়া মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সুবিধার জন্য আগের সরকার মানব পাচারের শিকার ব্রিটিশ নাগরিকদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছিল। আর বর্তমান সরকার এই চরম ও গোপন ক্ষমতা আরও সম্প্রসারিত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘পরবর্তী কোনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাইলে ৯০ লাখ মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে পারেন— এই আশঙ্কা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, বিশেষ করে যদি ভবিষ্যতে কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতায় আসে।’
রানিমিড ট্রাস্টের পরিচালক শাবনা বেগম বলেন, নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক ও প্রায় নজরদারিহীন ক্ষমতা ব্রিটেনের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি আরও বলেন, ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী আইনগুলোর মতো এখানেও কার্যকর কোনো নজরদারি ব্যবস্থা নেই। নাগরিকত্ব কোনো সুযোগ নয়, এটি একটি অধিকার। অথচ একের পর এক সরকার নাগরিকত্বকে “ভালো” বা “খারাপ” আচরণের সঙ্গে যুক্ত করে দ্বিস্তরের নীতি চালু করছে।’
প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর পাঁচজনের মধ্যে তিনজন নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। বিপরীতে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি মাত্র ২০ জনে ১ জন। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় অশ্বেতাঙ্গদের নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকি প্রায় ১২ গুণ বেশি।
ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছেন প্রায় ৯ লাখ ৮৪ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত, ৬ লাখ ৭৯ হাজার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এবং বাংলাদেশিসহ মোট ৩৩ লাখ এশীয় ব্রিটিশ। বাস্তবে যাঁদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই দক্ষিণ এশীয়, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বংশোদ্ভূত মুসলিম।
ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা শামিমা বেগমের। যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া এই কিশোরীর নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় এই যুক্তিতে যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারেন। যদিও বাংলাদেশ সরকার সে দাবি অস্বীকার করেছে। কিশোর বয়সে আইএসে যোগ দিতে তিনি যুক্তরাজ্য ছেড়েছিলেন এবং পরে দেশে ফিরতে চাইলে তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়।
প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন কনজারভেটিভ ও রিফর্ম ইউকে দলের রাজনীতিকেরা আরও কঠোর অভিবাসন নীতির কথা বলছেন। দুই দলই এমন পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যার মাধ্যমে আইনিভাবে বসবাসকারী লাখো মানুষকে যুক্তরাজ্য ছাড়তে বাধ্য করা হতে পারে।
এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই

যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব বাতিলের ‘গোপন ক্ষমতা’ ঝুঁকিতে মুসলিম নাগরিকরা: প্রতিবেদন
সিটিজেন ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে সরকারের হাতে থাকা নাগরিকত্ব বাতিলের ‘চরম ও গোপন’ ক্ষমতা লাখো মুসলিম নাগরিককে গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলছে। এই ক্ষমতার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে একটি নতুন গবেষণা প্রতিবেদন।
যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য মানবাধিকার ও নীতিবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রানিমিড ট্রাস্ট ও রিপ্রিভ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী প্রায় ৯০ লাখ মানুষ— যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ আইনগতভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ক্ষমতা দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে পারিবারিক বা বংশগত সম্পর্ক রয়েছে— এমন নাগরিকদের ওপর অসমভাবে প্রয়োগ হচ্ছে। ফলে এসব পটভূমির মানুষেরা বিশেষ ঝুঁকিতে পড়ছেন।
রানিমিড ট্রাস্ট ও রিপ্রিভ উভয়ই সতর্ক করে বলেছে, বর্তমান নাগরিকত্ব বাতিলের ব্যবস্থা কার্যত মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি পদ্ধতিগত হুমকিতে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতির তুলনা টানা হয়েছে ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের প্রতীক হয়ে ওঠা ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি’র সঙ্গে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে— এমন ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশের শিকড় এসব অঞ্চলে।
বর্তমান আইনে সরকার কোনো ব্রিটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে, যদি তারা মনে করে ওই ব্যক্তি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য। এমনকি তিনি সেই দেশে কখনো বসবাস না করে থাকলেও বা নিজেকে সে দেশের নাগরিক মনে না করলেও এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব।
অধিকারকর্মীদের মতে, এর ফলে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে একটি বর্ণভিত্তিক স্তরবিন্যাস তৈরি হয়েছে। এতে মুসলিম নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার শর্তসাপেক্ষ হয়ে উঠছে, যা শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
রিপ্রিভের কর্মকর্তা মায়া ফোয়া মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সুবিধার জন্য আগের সরকার মানব পাচারের শিকার ব্রিটিশ নাগরিকদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছিল। আর বর্তমান সরকার এই চরম ও গোপন ক্ষমতা আরও সম্প্রসারিত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘পরবর্তী কোনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাইলে ৯০ লাখ মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে পারেন— এই আশঙ্কা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, বিশেষ করে যদি ভবিষ্যতে কোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতায় আসে।’
রানিমিড ট্রাস্টের পরিচালক শাবনা বেগম বলেন, নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক ও প্রায় নজরদারিহীন ক্ষমতা ব্রিটেনের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি আরও বলেন, ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী আইনগুলোর মতো এখানেও কার্যকর কোনো নজরদারি ব্যবস্থা নেই। নাগরিকত্ব কোনো সুযোগ নয়, এটি একটি অধিকার। অথচ একের পর এক সরকার নাগরিকত্বকে “ভালো” বা “খারাপ” আচরণের সঙ্গে যুক্ত করে দ্বিস্তরের নীতি চালু করছে।’
প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর পাঁচজনের মধ্যে তিনজন নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। বিপরীতে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি মাত্র ২০ জনে ১ জন। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় অশ্বেতাঙ্গদের নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকি প্রায় ১২ গুণ বেশি।
ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছেন প্রায় ৯ লাখ ৮৪ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূত, ৬ লাখ ৭৯ হাজার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এবং বাংলাদেশিসহ মোট ৩৩ লাখ এশীয় ব্রিটিশ। বাস্তবে যাঁদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই দক্ষিণ এশীয়, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বংশোদ্ভূত মুসলিম।
ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা শামিমা বেগমের। যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া এই কিশোরীর নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় এই যুক্তিতে যে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারেন। যদিও বাংলাদেশ সরকার সে দাবি অস্বীকার করেছে। কিশোর বয়সে আইএসে যোগ দিতে তিনি যুক্তরাজ্য ছেড়েছিলেন এবং পরে দেশে ফিরতে চাইলে তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়।
প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন কনজারভেটিভ ও রিফর্ম ইউকে দলের রাজনীতিকেরা আরও কঠোর অভিবাসন নীতির কথা বলছেন। দুই দলই এমন পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যার মাধ্যমে আইনিভাবে বসবাসকারী লাখো মানুষকে যুক্তরাজ্য ছাড়তে বাধ্য করা হতে পারে।
এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই