ব্রেকিং
ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধে শি-পুতিনকে পাশে পাচ্ছে না মাদুরো
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এখন হয়তো নতুন করে ভাবছেন—আসলে তার প্রকৃত বন্ধু কারা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও কূটনৈতিক চাপের মুখে একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন ও রাশিয়ার সমর্থন আগের মতো দৃশ্যমান নয়। বিশ্লেষকদের মতে, বেইজিং ও মস্কোর সমর্থন এখন অনেকটাই প্রতীকী পর্যায়ে নেমে এসেছে।

বছরের পর বছর ধরে ভেনেজুয়েলার সমাজতান্ত্রিক সরকারকে রাজনৈতিক, আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে এসেছে এই দুই দেশ। সাবেক প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজের আমল থেকেই সেই সম্পর্কের ভিত গড়ে ওঠে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কার্যকর সহায়তার বদলে চীন ও রাশিয়া মূলত বিবৃতি আর কূটনৈতিক বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

এই প্রেক্ষাপটে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন, গোয়েন্দা বিমান এবং প্রায় ১৫ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। গত কয়েক মাসে মাদক বহনের অভিযোগে একাধিক নৌযানে হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছে। সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে একটি তেলবাহী ট্যাংকারও জব্দ করেছে মার্কিন বাহিনী।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এসব অভিযান মাদক পাচার রোধের অংশ এবং জব্দ করা ট্যাংকারটি নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত ছিল। তবে অনেক বিশ্লেষক এবং মাদুরোর অভিযোগ, মূল লক্ষ্য কারাকাসে ক্ষমতার পালাবদল ঘটানো।

তাহলে সংকটের এই সময়ে কেন বদলে গেল মাদুরোর মিত্রদের অবস্থান?

চিলির আন্দ্রেস বেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ফের্নান্দো রেয়েস মাত্তার মতে, ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ফেরার পর ভেনেজুয়েলা এখন চীন ও রাশিয়ার কাছে কম অগ্রাধিকার পাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়া ব্যস্ত, আর চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক সামাল দিতে চাইছে। এই অবস্থায় ভেনেজুয়েলাকে রক্ষায় বড় ঝুঁকি নিতে তারা আগ্রহী নয়।

২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রাশিয়া বিপুল অর্থ ও সামরিক সম্পদ সেখানে ব্যয় করছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় দেশটির অর্থনীতি ও সামরিক সক্ষমতাও চাপে রয়েছে।

কলম্বিয়ার ইসেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভ্লাদিমির রুভিনস্কি বলেন, 'চলমান যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার পক্ষে আগের মতো মিত্রদের সহায়তা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সিরিয়া ও ইরানের ক্ষেত্রেও একই বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে।' তার মতে, রাশিয়া নতুন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি নিতে চায় না, আর চীনও মাদুরোকে রক্ষা করতে গিয়ে শুল্ক বা বাণিজ্যিক চাপ বাড়াতে আগ্রহী নয়।

ওয়াশিংটন পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে মাদুরো চীন ও রাশিয়ার কাছে সামরিক সহায়তা চেয়েছিলেন। রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ তখন যুক্তরাষ্ট্রকে সংকট না বাড়ানোর আহ্বান জানান। ট্যাংকার জব্দের পর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফোন করে মাদুরোকে সমর্থনের কথা বললেও বাস্তবে কোনো কার্যকর সহায়তা দেয়নি মস্কো।

চীনের অবস্থানও প্রায় একই। বেইজিং সামরিক সহায়তার ইঙ্গিত না দিয়ে ‘বহিঃহস্তক্ষেপ’ এর নিন্দা করেছে এবং সংযমের আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মাদুরোকে প্রকাশ্যে রক্ষা করলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক অগ্রগতি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে, অথচ চীনের জন্য তাতে তেমন লাভ নেই।

ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও তেল শিল্পের অবনতি চীনের আগ্রহ আরও কমিয়েছে। নতুন ঋণ প্রায় বন্ধ করে দিয়ে বেইজিং এখন পুরোনো ঋণ আদায়ে বেশি মনোযোগী।

এর পাশাপাশি গত জুলাইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক মাদুরোকে আরও কোণঠাসা করেছে। গুরুতর জালিয়াতির অভিযোগে নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সরকারঘনিষ্ঠ নির্বাচন কমিশন মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করলেও বিস্তারিত ফল প্রকাশ করেনি। বিরোধীরা নথি প্রকাশ করে দাবি করেছে, তাদের প্রার্থী এডমুন্ডো গনজালেসই জয়ী হয়েছেন।

অধ্যাপক রুভিনস্কির ভাষায়, এই মুহূর্তে মাদুরো প্রায় একা। রাশিয়া ও চীন হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করবে, কিন্তু বাস্তবে আর এগোতে রাজি নয়। একসময়ের দৃঢ় সমর্থন এখন কেবল কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

সূত্র: বিবিসি