ব্রেকিং
কেউ জানে না জনস্বাস্থ্যের আইভিফ্লুইড-ব্লাডব্যাগ উৎপাদন শুরু কবে

মানব দেহের শিরায় দেওয়ার জন্য স্যালাইন (আইভিফ্লুইড) র্অধশতাব্দিরও আগে উৎপাদন শুরু করেছিল রাষ্ট্রয়াত্ব প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট-আইপিএইচ। প্রতিষ্ঠানটির বছরে উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৬-১৭ লাখ স্যালাইন। সরকারি হাসপাতালে নামমাত্র মূল্যে সরবরাহ করা হতো এসব স্যালাইন। এখন শতশত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত থাকায় তা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এশিয়ার মধ্যে এক সময়ে নামকরা প্রতিষ্ঠান ছিল আইপিএইচ। এটির সুনাম এখনও ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য এটিকে আধুনিকায় করতে হবে এবং সেখানে যেসব জনবল রয়েছে তাদেরকে প্রশিক্ষিত করতে হবে।

সরকারি হাসপাতালের বাজার ধরতে মরিয়া হয়ে ওঠে দেশেরে বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এজন্য তারা ওষুধ প্রশাসনকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রয়াত্ব প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধ করতে নানা কৌশল নেয়। শেষ পর্যন্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বন্ধ করতে সক্ষম হয় তারা। এতে রাষ্ট্রের টাকায় কেনা কোটি কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রপাতি অকেজো পড়ে আছে। অপরদিকে রোগীরা তা বাইরে থেকে অস্বাভাবিক বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

আইপিএইচ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ টাকায় ৫০০ মিলিগ্রামের ও ৪৫ টাকার ১০০০ মিলিগ্রামের শিরায় দেওয়ার স্যালাইন সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ দিতো আইপিএইচ। সরকারি দামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠতে পারছিল না দেশের বেসরকারি উৎপাদনকারিরা। এজন্য তারা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহায়তায় আইপিএইচ এর উৎপাদন বন্ধে মরিয়া হয়ে ওঠে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে না এমন অযুহাতে ২০২০ সালের জুনে আকস্মিক পরিদশনে আসেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলাম। তারা এসে আইভিফ্লুইড ও ব্লাডব্যাগ কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে রাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে সেখান এক ভুতুরে পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে আগত রোগীরা প্রতি ৫০০ মিলিগ্রামের স্যালাইন ৮০-৯০ টাকায় এবং ১০০০ মিলিগ্রামের স্যালাইন ৯০-১১০ টাকায় কিনতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। আর সরকারি হাসপাতালে ব্লাডব্যাগ সরবরাহ দেওয়া হতো একক ইউনিট ৬০ টাকা, ডাবল ইউনিট ৯২ টাকা, ট্রিপল ইউনিট ১০৫ টাকা এবং চার ইউনিটের ১০৯ টাকায় সরবরাহ দেওয়া হতো। র্বতমানে একই ব্যাগ রোগীর স্বজনদের কিনতে চারগুণ ছয়গুণ বেশি দামে বাইরের প্রতিষ্ঠান থেকে। সিঙ্গেল ৪০০ টাকা, ডাবল ৪৫০ টাকা, ট্রিপল ৫০০ টাকা এবং চার ইউনিট ৬০০ টাকায় কিনছে রোগীর জন্য।

দীর্ঘদিন কারখানা দুটি বন্ধ থাকায় রাষ্ট্রেরে টাকায় কেনা কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়েছে। যা বর্তমানে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সরকার পরিবর্তন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু রাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আইপিএইচ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বারবার আবেদন নিবেদন করলেও সরকার এতে সায় দিচ্ছে না।

জানা গেছে, বেসরকারি ছয়টি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে আইভিফ্লুইড তৈরি করছে। এরা হচ্ছে বেক্সিমকো, স্কয়ার, ইনসেপ্টা, ওরিয়ন, লিবরা ইনফিউশন ও অপসো স্যালাইন।

আর ব্লাডব্যাগ কেউ তৈরি করছে না। তবে জেএমএস নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

আইপিএইচ জানায়, আইভিফ্লুইড ও ব্লাডব্যাগ তৈরিতে নিয়োজিত দক্ষ লোকবল এখন অদক্ষে রূপান্তর হয়েছে। আইভিফ্লুইড ইউনিটে ১১৫ জন এবং ব্লাগব্যাগে ছিল ৪৩ জন লোক কর্মরত। র্বতমানে দুই ববিভাগ মিলে ৫০ জনের মতো লোকবল থাকলেও তারা বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন। ২০-২৫ কোটি টাকা ব্যয় করলে রাষ্ট্রয়াত্ব এই প্রতিষ্ঠানটি আবার মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে এমনটাই প্রত্যাশা করছে আইপিএইচ কর্তৃপক্ষ।

আইপিএইচ এর সাবেক পরিচালক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলনে, আইপিএইচ এক সময়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান ছিল। এখানে বিভিন্ন ধরণের টিকা তৈরি হতো। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আইপিএইচকে আগের সুনাম ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিতে হবে। এখানে প্রশিক্ষিত জনবল রয়েছে। তাদেরকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানী করাও সম্ভব।

জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. মোমিনুর রহমান সিটিজেন জার্নালকে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড-ইডিসিএল আইভিফ্লুইড তৈরিরে কাজ হাতে নিয়েছে। তবে ব্লাডব্যাগ কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে গণপূর্ত বিভাগ থেকে ভবন পরিদর্শন করা হয়েছে। তাদের মতামত হচ্ছে ভবনের ছাদ নষ্ট হয়ে গেছে। ইউনিট চালু করতে হলে নতুন করে ভবন তৈরি করতে হবে। নতুন ভবন তৈরির জন্য একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।